১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর শুন্যপদে বিচারপতি নিয়োগের দাবির পর হাইকোর্ট পেল নুতন তিন বিচারপতি 

মোল্লা জসিমউদ্দিন : গত শনিবার   কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এক বিজ্ঞপ্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট নুতন তিন জন অতিরিক্ত বিচারপতি পেল।দু বছরের জন্য তাঁরা অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন কলকাতা হাইকোর্টে। নুতন তিনজন  জন অতিরিক্ত বিচারপতিরা হলেন অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাই চট্টোপাধ্যায় ও শুভেন্দু সামন্ত।এঁরা প্রায়জনেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রশাসনিক কাজকর্ম করতে একদা।কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে গত শনিবার কলকাতা হাইকোর্টের নুতন তিন জন অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি  দেশের রাজধানী দিল্লিতে বিচারপতিদের সম্মেলনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সাথে  দেখা করে কথা বলেছিলেন বাংলার  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । জানা গেছে  দশ মিনিটের বেশি সময়  ধরে কথা হয়েছে উভয়ের মধ্যে । এই স্বল্প সময়ের বৈঠকে উঠে এসেছে আদালতে  আঞ্চলিক  ভাষার গুরত্ব নিয়ে আলোচনা । ওইদিন  প্রধানমন্ত্রী আদালত গুলিতে  আঞ্চলিক ভাষাগুলিতে জোর দেওয়ার কথা বলেছিলেন, তাতে খুশি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ওইদিন  তিনি প্রধানমন্ত্রী কে  ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সম্প্রতি  দেশের রাজধানী দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সুপ্রিম কোর্ট সহ রাজ্যের সমস্ত হাইকোর্টের  বিচারপতি ও মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলন ছিল। এই সম্মেলনে যোগ দিতে নির্ধারিত দিনের আগেই দিল্লি পৌঁছে গিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে বিচার বিভাগ সংক্রান্ত সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা বলেছিলেন, – ‘কলকাতা হাইকোর্টে  ৭২ জন বিচারপতির  শুন্যপদ থাকলেও  ৩৯  জন বিচারপতি রয়েছেন । আমরা ( রাজ্য সরকার)  ছ’মাস আগে ১১ জনের তালিকা পাঠিয়েছিলাম কেন্দ্রের কাছে। তাতে ১ জন কে পেয়েছি। প্রয়োজনীয় বিচারপতি না থাকায় মামলার পাহাড় বাড়ছে ।’তাছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী বলেন ,-  ‘ইতিমধ্যে আমাদের  হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ  আছে। কলকাতা হাইকোর্ট এবং জলপাইগুড়ি হাইকোর্ট এর সার্কিট বেঞ্চ। কলকাতা সংলগ্ন নিউটাউনে ইতিমধ্যেই ১০ একর জমি হাইকোর্টের নতুন বিল্ডিংয়ের জন্য দিতে পারবে রাজ্য সরকার। এর থেকে বেশি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। পুরনো বিল্ডিংটি বন্ধ করা হবে না, সেটিও কাজ করবে। কারণ, এটি হেরিটেজ বিল্ডিং। ইতিমধ্যে জলপাইগুড়িতে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ  কাজ করা শুরু করেছে। এরফলে উত্তরবঙ্গ এর মানুষজন   যথেষ্ট আইনী সুবিধা পাবেন।’ জানা গেছে কলকাতা হাইকোর্টের ২ লক্ষ ২২ হাজার মত বিচারধীন মামলা রয়েছে। ৭২ জন বিচারপতি থাকার কথা থাকলেও নেই ৩৩ জন বিচারপতি। মাত্র ৩৯ জন বিচারপতি কলকাতা হাইকোর্টে দু লক্ষের বেশি মামলার বিচার চালাচ্ছেন। অভিযোগ, তাতে বিচারপ্রার্থীদের দীর্ঘমেয়াদি সময় লাগছে বিচার পেতে।সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানান ” আমরা চাই দ্রুত শুন্যপদে বিচারপতি নিয়োগ হোক, এতে সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের সুবিধা হবে “।নবান্ন সূত্রে প্রকাশ , গত ১১ বছরে রাজ্যে ১ টি  সার্কিট বেঞ্চ ছাড়াও ৬ টি  সিবিআই কোর্ট, ৮৮টি  ফাস্টট্র্যাক কোর্ট, ৪১ টি মহিলা কোর্ট, ১৯ টি  হিউম্যান রাইটস কোর্ট, ৪ টি কমার্শিয়াল কোর্ট ও ১৯ টি চাইল্ড ফ্রেন্ডলি কোর্ট তৈরি হয়েছে।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

এরমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের ফান্ডে ১৫১টা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট ছিল। যার মধ্যে ৮৮টা-ই রাজ্য চালাচ্ছে। কারণ কেন্দ্র থেকে টাকা আসছে না। এই অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। পাশাপাশি, বিচারপতির শূন্য পদ থাকায় মামলার শুনানি করা যাচ্ছে না। রয়েছে মামলার দীর্ঘসূত্রিতাও। এরফলে সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে।শুধু হাইকোর্টেই ৭২টি বিচারপতি পদ থাকলেও, বিচারপতি আছেন মাত্র ৩৯ জন।তাও ১ জন সদ্য অবসর গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট কলেজিয়াম থেকে ১১ জনের নাম পাঠানো হয়েছে। অজশ্র মামলা জমে থাকছে। শুধু হাইকোর্টেই ২ লক্ষের বেশি মামলা জমে আছে। এই সবটাই মুখ্যমন্ত্রী বিচারপতি সম্মেলনে তুলে ধরেছিলেন বলে জানা গেছে ।সময়ের গতিতে কলকাতা হাইকোর্টে বেড়েছে পাহাড় সমান মামলা, বিশেষত একুশে বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তীতে গঠিত হয়েছে বেশকিছু বৃহত্তর বেঞ্চ। ঠিক এইরকম জায়গায় হাইপ্রোফাইল মামলার ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা।তারিখের পর তারিখ মিলছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপ্রার্থীদের বলে অভিযোগ। অথচ মামলায় বিচারের গতি আনতে নিয়োগ করছেনা কেন্দ্রীয় সরকার ।এই মুহুর্তে কলকাতা হাইকোর্টে প্রায় ত্রিশ শতাংশের বেশি   বিচারপতির পদ খালি রয়েছে। পাহাড় সমান মামলা। অথচ সেই হারে হচ্ছেনা মামলার নিস্পত্তি। নিদিষ্ট সময়সীমার মধ্যে শুনানি শুরু হয়নি অনেক মামলার। নেই পর্যাপ্ত বিচারপতি। বাধ্য হয়ে সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের মিলছে শুধুই ‘তারিখ’।উল্লেখ্য, ভারতবর্ষে উচ্চ আদালত স্থাপনের ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্ট প্রাচীণতার ক্ষেত্রে অন্যতম। গত ১৮৬২ সালে স্থাপিত হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। বর্তমান হিসাবে কলকাতা হাইকোর্টে সর্বমোট বিচারপতি থাকার কথা ৭২ জন।এঁদের মধ্যে ৫৪ জন স্থায়ী এবং ১৮ জন অস্থায়ী। সেইজায়গায় কলকাতা হাইকোর্টে রয়েছেন ৩৯ জন বিচারপতি। দেখা যাচ্ছে এখনও ৩৩ জন বিচারপতি পদ খালি রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে।যা শতাংশ বিচারে পয়তাল্লিশ এর মত ছিল। সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম কমিটি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে হাইকোর্ট গুলির বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ দেয়।যা কেন্দ্র সরকার মেনে নেয়।তবে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকার কলেজিয়াম কমিটির সুপারিশ কেন কার্যকর করছেনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।। ‘বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলে’র শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান  আনসার মন্ডল জানিয়েছেন – ” আমরা চাই কলকাতা হাইকোর্টে শুন্যপদে দ্রুত বিচারপতি নিয়োগ হোক। সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা দ্রুত বিচার পাবেন এতে”। ৩৩ জন বিচারপতি পদ শুন্য থাকায় দাখিল হওয়া মামলার বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানান – ” অনেক মামলায় শুনানির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে, মামলার নিস্পত্তি ঘটছে কম।আমরা চাই দ্রুত বিচারপতি নিয়োগ হোক “।

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

এইমুহূর্তে কলকাতা হাইকোর্টে ২ লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি মামলা এখনও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে । রাজ্যের নিম্ন আদালত  গুলিতে  মামলা  রয়েছে ২৬ লক্ষেরও বেশি।গত মাস অবধি দেখা যাচ্ছে  কলকাতা হাইকোর্টে জমে থাকা মামলার সংখ্যা ২ লক্ষ ২১ হাজারের মত । এর মধ্যে দেওয়ানি মামলা ১ লক্ষ ৮৯ হাজার মত । ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ৩২ হাজার মত । কলকাতা হাইকোর্টের পাশাপাশি রাজ্যের নিম্ন আদালত গুলিতে মামলা রয়েছে  ২৬ লক্ষ এর বেশি । এই পরিস্থিতিতে গত ২ রা মে থেকে কলকাতা হাইকোর্টে মামলার শুনানি চালু হয়। প্রথম পর্যায়ে সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর  একটা পনেরো মিনিট অবধি, শেষ পর্যায়ে চলবে দুপুর দুটো থেকে বিকেল সাড়ে চারটে পর্যন্ত। তবে  স্বাভাবিক শুনানি পর্বের সময়সীমা ১৫ মিনিট বেড়ে যাওয়ায় মামলার পাহাড় কিছুটা কমবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।  সাধারণ বিচারপ্রার্থী থেকে আইনজীবীরা প্রত্যেকেই চাইছেন কলকাতা হাইকোর্টের ৩৩ জন বিচারপতির পদ অবিলম্বে পূরণ হোক।অপরদিকে একের পর এক নির্ভীক নির্দেশদানকারি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে স্বাভাবিক শুনানি পর্বের গতি কমে যাওয়ায় ( আইনজীবীদের একাংশের গড়হাজিরায়) বিচারপ্রার্থীরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে গত শনিবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে তিনজন অতিরিক্ত বিচারপতি পদে আগামী দু বছরের জন্য নিয়োগ হয়েছেন।আগামী সপ্তাহে এঁরা শপথ গ্রহণ করবেন অতিরিক্ত বিচারপতি পদে। বর্তমানে ৩৯ জন বিচারপতির সাথে নুতন ৩ জন বিচারপতি যুক্ত হলে ৪২ জন বিচারপতি দাঁড়াবে কলকাতা হাইকোর্টে।তবে ইতিমধ্যেই ১ জন অবসর গ্রহণ করেছেন।অর্থাৎ ৪১ জন দাঁড়াচ্ছে সংখ্যাটি।এখনও ৩১ জন শুন্যপদ রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি আসনের।

Advertisement