১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Advertisement

স্টেশনে ছোট্ট প্ল্যাটফর্মে বৃষ্টির দেখা মেলে সকাল সন্ধ্যে।কে সেই বৃষ্টি জেনে নিন

বাঁকুড়ার পিয়ারডোবা স্টেশনে ছোট্ট প্ল্যাটফর্মে বৃষ্টির দেখা মেলে সকাল সন্ধ্যে। এই বৃষ্টির জীবনের গল্পটা একটু অন্যরকম। একদিকে সে যেমন কাঠের উনুনে জ্বাল দিয়ে রান্না করে, অন্যদিকে নিজের ছোট্ট মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে তাকে স্কুলে পাঠিয়ে সে বেরিয়ে পড়ে দু’পয়সা রোজগারের উদ্দেশ্যে।

কথায় আছে, যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। কিন্তু এই বৃষ্টি প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছে মাথা উঁচু করে, এই বৃষ্টি আজ স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে সংসারের হাল। কারণ তার বিশ্বাস একটাই, সাহস এবং ইচ্ছে থাকলেই মূল লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। তাই হার মেনে নেওয়া শব্দটা হয়তো তার অভিধানে নেই।

Advertisement

বাঁকুড়া জেলার বেশ কিছুটা দূরে সাবড়াকোনের একটি ছোট্ট বাড়িতেই শুরু হয় বৃষ্টির প্রতিদিনের লড়াই। খুব ভোরবেলা উঠে কাঠের উনুন জ্বালিয়ে সংসারের জন্য রান্না করে গৃহবধূ বৃষ্টি। এরপর অভিভাবক হয়ে ঘন্টাখানেক মেয়েকে পড়ায় সে। তারপর মেয়েকে স্কুলের জন্য তৈরি করতে করতে ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৯.১০ বাজলেই দুটি ভারী ব্যাগ হাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে বৃষ্টি। বাসে চেপে রওনা দেয় পিয়ারডোবা স্টেশনের উদ্দেশ্যে। সবকিছুই চলে ঘড়ির কাঁটার তালে, কারণ ট্রেন না ধরতে পারলে হয়তো পরেরদিন হাঁড়ি চড়া নিয়েও তৈরি হবে সংশয়।

প্ল্যাটফর্মে সকালের ট্রেন এলেই শুরু হয় বৃষ্টির আরেক লড়াই। ট্রেন কামরায় উঠেই দুই ব্যাগ খুলে সেগুলি থেকে কুর্তি, পাতিয়ালা, নাইটি বের করে কামরায় কামরায় হকারি করে এই গৃহবধূ। আর ট্রেনে বৃষ্টি উঠলেই এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে নিত্য যাত্রীদের মুখে। কারণ, তাদের কাছে বিশ্বাসের অপর নাম বৃষ্টি।

Advertisement

কিন্তু বৃষ্টির থেকে একটি পোশাক কেনার সময় তারা হয়তো কেউ জানে, কেউবা জানে না এই বৃষ্টি আদতে একজন এম.এ পাশ এবং বি.এড ট্রেনিংপ্রাপ্ত এক উচ্চশিক্ষিতা মহিলা। তারাও বৃষ্টির এই লড়াইকে কুর্নিশ জানায়। কুর্নিশ জানাই আমরাও।

Advertisement