পাপাই সরকার :চিকিৎসার গাফিলতির জেরে সাড়ে ৮ মাসের গর্ভবতী মহিলার মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ালো শুক্রবার বর্ধমান শহরের বি সি রোড এলাকার বর্ধমান থানার উল্টোদিকে অবস্থিত একটি বেসরকারী নাসিংহোমের বিরুদ্ধে। বর্ধমান শহরের তিন নম্বর ইছলাবাদের বাসিন্দা বছর ২৭ এর অন্তঃসত্ত্বা মহিলা অপর্ণা রায়ের বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়।
তারপর পরিবারের সদস্যরা শুক্রবার সকাল ছটা নাগাদ বর্ধমান শহরের শিশুমঙ্গল নার্সিংহোমে রোগীকে নিয়ে আসেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ দীর্ঘক্ষণ রোগীকে চিকিৎসা না করে বেডে শুইয়ে রাখা হয় এবং তারপর নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বলা হয় রোগীর অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তড়িঘড়ি তাকে বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। নার্সিংহোম এর পক্ষ থেকেই তড়িঘড়ি এম্বুলেন্স জোগাড় করে গর্ভবতী মহিলাকে বর্ধমান হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এমনটাই অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যর।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেই কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা পরিবারের সদস্যদের জানান, রোগীর অনেকক্ষণ আগেই মৃত্যু ঘটেছে।চিকিৎসকের গাফিলতির কারণেই গর্ভবতী মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এই বিষয়ে পরিবারের এক সদস্য মনিকা রায় জানান, কাল রাত থেকেই প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছিল পেশেন্ট। আজ সকাল ছয়টায় আনার পরেই শিশুমঙ্গল নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিয়ে নেয় এবং অক্সিজেন দেয়ার পরই এখানেই মারা যায়। নার্সিংহোম এর পক্ষ থেকে জানানো হয় অজ্ঞান হয়ে গেছে কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকের জানান অনেকক্ষণ আগেই রোগী মারা গেছে।
কদিন আগে থেকেই চিকিৎসককে ফোন করা হচ্ছিল কিন্তু চিকিৎসক বলছিল এখনো দেরি আছে। কিন্তু আমাদের মনে হয় বাচ্চা কাল রাতেই পেটের মধ্যে মারা গেছে। এমনকি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পরিবারের কাউকে না জানিয়েই তড়িঘড়ি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে হাসপাতালে পাঠানো হয় রোগীকে। আমরা চাই দ্রুত নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
এই বিষয়ে মৃত গর্ভবতী মহিলার স্বামী অমিত রায় জানান,আমার স্ত্রীর গভীর রাতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট ওঠে। তখন আমরা সকাল বেলায় নার্সিংহোমের কম্পাউন্ডারের সঙ্গে ফোনে কথা বলি। উনি আমাদের আধঘন্টার মধ্যে আসতে বলেন। রোগীকে নিয়ে আসার পর নার্সিংহোমে বারবার বেল বাজিয়েও কেউ দরজা খোলেনি। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর একজন আসেন। সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে ওপরে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই নার্সিংহোমেই এক থেকে দেড় ঘন্টার উপরে রোগীকে রাখা হয়। সেই ধরনের কোনো ভালো চিকিৎসা করা হয়নি। সেই মুহূর্তে আমাকে কোন কিছু বলা হয়নি হাসপাতালে রেফার করার ব্যাপারে। দীর্ঘক্ষণ কেটে যাওয়ার পর অবশেষে বলা হয় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তখন আমি তড়িঘড়ি উপরে গিয়ে রোগীকে যখন তুলি তখন দেখি অজ্ঞান অবস্থায় রোগী রয়েছে। আমার স্ত্রী সাড়ে আট মাসের গর্ভবতী এবং পেটে যমজ সন্তান ছিল। ডক্টর রবীন্দ্রনাথ দোলুই এর আন্ডারে চিকিৎসা করানো হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে। আমরা আজ সকাল ছয়টা এগারো নাগাদ শিশুমঙ্গল নার্সিংহোমে নিয়ে আসি ।
এটা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকের গাফিলতির জন্যই হয়েছে। রোগীকে কোনরকম অক্সিজেন এবং ভালো চিকিৎসা করা হয়নি। আমরা এই বিষয়ে বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। প্রশাসন যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় সেটাই আমরা চাইব। আমরা হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার পরেই চিকিৎসাকরা বলেন কুড়ি থেকে পঁচিশ মিনিট আগেই রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। ততক্ষণ পর্যন্ত এই নার্সিংহোমে রোগীকে ফেলে রাখা হয় বিনা চিকিৎসায়।