১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Advertisement

টেটে বিএড প্রার্থীদের বৈধতা ঠিক করবে সুপ্রিম কোর্ট, জানালো কলকাতা হাইকোর্ট 

মোল্লা জসিমউদ্দিন : টেটে বিএড প্রার্থীদের ‘গ্রহনযোগ্যতা’ ঠিক করবে সুপ্রিম কোর্ট, সোমবার দুপুরে এক মামলার শুনানি পর্বে জানালো কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ।টেট পরীক্ষায় কি বিএড প্রার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন? না কি টেটের জন্য নির্দিষ্ট ডিএলএড ডিগ্রিধারীরাই সুবিধা পাবেন? প্রাথমিকে নিয়োগের নিয়ম নিয়ে এই বিষয়ক মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্ট জানালো -‘  সুপ্রিম কোর্টই ঠিক করে দিতে পারবে’।  সুপ্রিম  কোর্টের নির্দেশ না পাওয়া গেলেও টেটে নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে যাবে না।তা যথা নিয়মে চলতে পারে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।এদিন  টেটের নিয়োগ সংক্রান্ত এই মামলাটির শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে। সেখানেই বিচারপতি জানিয়ে দেন, -‘ টেট পরীক্ষায় বিএড প্রার্থীরা অংশ নিতে পারবেন কি না? সে বিষয়ে এখনই হস্তক্ষেপ করবে না হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টে এ সংক্রান্ত যে মামলাটি চলছে, তার রায়ের উপরেই গোটা বিষয়টি নির্ভর করবে’।গত ২৯ সেপ্টেম্বর, প্রাথমিক স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে পর্ষদ। সেখানে বলা হয়, ডিএলএড -এর পাশাপাশি বিএড  যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন, যা নিয়ে আপত্তি তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়-সহ বেশ কয়েক জন টেট পরীক্ষার্থী। তাঁদের দাবি -‘  ডিএলএড ডিগ্রি শুধুমাত্র টেট পরীক্ষার জন্য কাজে লাগে। আর বিএড প্রয়োজন হয় স্কুল সার্ভিস কমিশন এর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের যে কোনও পরীক্ষায়। অর্থাত্‍, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকের জন্য দরকার ডিএলএড ডিগ্রি। আর উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রয়োজন বিএড ডিগ্রি।মামলাকারীদের আরও দাবি, -‘ প্রাথমিক স্কুলের পরীক্ষায় যদি বিএড প্রার্থীরাও সুযোগ পান, তবে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে। আর বঞ্চিত হবেন ডিএলএড ডিগ্রিধারীরা। কারণ, এই যোগ্যতা নিয়ে অন্য কোথাও আবেদন করা যায় না। তাই আদালত নির্দেশ দিক, ডিএলএড-রাই শুধু টেটের জন্য আবেদন করতে পারবেন’।সোমবার এই মামলার শুনানিতেই এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টের দিকে ঠেলে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট এর অবকাশকালীন বেঞ্চ ।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

এদিন কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে নুতন বিজ্ঞপ্তি ঘিরে যেসব মামলা দাখিল হয়েছে, তার শুনানি চলে। ফের মামলার বেড়াজালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে নুতন বিজ্ঞপ্তিটি। রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে  বিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদেরও কেন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে? অবিলম্বে বিজ্ঞপ্তি থেকে তাঁদের (বিএড প্রশিক্ষণকারীদের) বাদ দেওয়ার দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে  দায়ের হয়েছে মামলা । কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের বেঞ্চে দায়ের হয়েছিল এই মামলা। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের  বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে মামলাটি হয়েছে  কলকাতা হাইকোর্টে  ।দশ জন চাকরিপ্রার্থী এই মামলাটি দাখিল  করেছেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজ্যের দেওয়া প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং গত ২৮ জুন ২০১৮ সালের এনসিটিই-এর দেওয়া নোটিফিকেশনকে চ্যালেঞ্জ করে এই মামলা করা হয়েছে। যেখানে বিএডদেরকেও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য যোগ্য হিসাবে বিবেচনায় করা হয়েছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজ্য প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে থাকে । প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে চাকরি প্রার্থীর যোগ্যতায় কেন বিএডদের সন্মতি দেওয়া হল? সেই প্রশ্ন তুলেই এই মামলা। মামলাকারীদের দাবি, -‘ আগে বিএডদের সুযোগ দেওয়া হত না। তবে  পরে রাজ্য বিএডদেরও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য যোগ্য বলে ঘোষণা করে থাকে । এরফলে ডিএলএড’দের সুযোগ কমে যাচ্ছে। ডিএলএড ট্রেনিং শুধুমাত্র প্রাথমিক স্তরের প্রার্থীদের জন্যই। মামলাকারীদের দাবি, -‘ বিএড বাদ দিয়ে অবিলম্বে একটি সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করুক প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ’।২০১৮ সালে এনসিটিই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, বিএডরা প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক হিসাবে ট্রনিংপ্রাপ্ত দের মতই বিবেচিত হবে।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

এদিকে, রাজ্যের তরফে জানান হয়েছে, -‘ সব আবেদনের ভিত্তিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে’। আগামী ২১ অক্টোবর থেকে আবেদন নেওয়া শুরু হবে বলে জানা গেছে । তার আগে   সোমবার সব পক্ষকে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ ছিল কলকাতা হাইকোর্টের।গত ২৯ শে সেপ্টেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফ থেকে নিয়োগের জন্য যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল সেইখানে উল্লেখ করা হয় যে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিএড  উত্তীর্ণ প্রার্থীরাও অংশগ্রহণ করতে পারবেন। আর এখানেই বেঁধেছে সমস্যা। ডিএলএড  যোগ্যতা সম্পন্ন চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে বিএড উত্তীর্ণ চাকরি প্রার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন এই বিষয়টি বিজ্ঞপ্তির একটি অংশে উল্লেখ থাকায় এর বিরোধিতা করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন দশজন চাকরি প্রার্থী।মামলাকারীদের দাবি, -‘ নিয়ম অনুযায়ী বিএড যোগ্যতা সম্পন্ন চাকরি প্রার্থীরা প্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। তাই পর্ষদের তরফ থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তির ওই নির্দিষ্ট অংশটি সংশোধন করার দাবি জানিয়ে  মামলাকারীরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। গত শুক্রবার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ফের মামলা দায়ের হয়েছে। প্রাথমিকের শূন্যপদে নিয়োগে চাকরি চেয়ে ওইদিন  প্রায় দেড় হাজার আবেদন জমা পড়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। এরপর জরুরি আবেদনের ভিত্তিতে মামলা শোনার আর্জি গ্রহণ করেছেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত।আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের এজলাসে। এখানেই শেষ নয়, আদালত সূত্রে আরও প্রকাশ , একই আবেদন নিয়ে আরও দু’ হাজার টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থী আদালতের দ্বারস্থ হতে চলছেন।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

এরফলে মোট মামলার সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। যেখানে শূন্যপদ মাত্র ৩৯২৯। তার চেয়ে মামলাকারীর সংখ্যা অনেক বেশি হবে। তাই এত জনকে কিভাবে চাকরি দেওয়া সম্ভব? তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। গত ২০১৪ সালের টেটের প্রেক্ষিতে দুটি নিয়োগ প্রক্রিয়া সংগঠিত হয়। একটি ২০১৬ সালে, যেখানে ৪২০০০ শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে বলে হাইকোর্ট কে  জানায় পর্ষদ। অপরটি হয় ২০২০ সালে, যেখানে ১৬৫০০ শূন্যপদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। তবে ঠিক কত শূন্যপদ রয়েছে? তা নিয়েই জটিলতা রয়েছে। অভিযোগ, নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক মামলায়, মামলা দায়েরের আগে তথ্য জানার আইনে শূন্যপদের সংখ্যা জানতে চেয়েছিলেন মামলাকারীরা। সেখানে মামলাকারীদের এক রকম তথ্য দেয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। আবার এই সংক্রান্ত একাধিক মামলায় আদালতে অন্যরকম তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

এই মামলায় বোর্ডের সভাপতিকে মামলাকারীদের সঙ্গে বসে শূন্যপদের সঠিক পরিসংখ্যানও দিতে বলেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে শূন্যপদে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ ছিল আদালতের। সেই মতোই বিজ্ঞপ্তি জারি করে পর্ষদ। তার পরই হয়েছে একাধিক মামলা।  সোমবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে নুতন বিজ্ঞপ্তিতে বিএড প্রার্থীদের বাদ দেওয়ার আবেদন বিষয়ক  মামলার শুনানি কলকাতা হাইকোর্টে চলে।এদিন কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট করে দেয় – বিএড প্রার্থীদের গ্রহনযোগ্যতা ঠিক করবে সুপ্রিম কোর্ট, কেননা এই বিষয়ক মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। তবে টেটে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক চলতে পারে।

Advertisement