নুতন ভোরের প্রতিবেদন : দ্যূতক্রীড়ক। সহজ বাংলায় জুয়াড়ি। পরিভাষায় গ্যাম্বলার। এই উপন্যাসে ব্রাত্য বসু আমাদের এনে দাঁড় করালেন এক জুয়াড়ির সামনে। যাঁর ব্যক্তিজীবন, সমাজজীবন ও শিল্পজীবনের বিভিন্ন অলিন্দে ঘুরে লিখলেন এক চমকপ্রদ নিয়তিতাড়িত ইতিহাস। সেই দ্যূতক্রীড়কের নাম বাংলা সাধারণ রঙ্গালয়ের ইতিহাসে চিরবিমূর্ত । শিশির ভাদুড়ি। প্রথম জীবনে প্রফেসর এস.কে.বি থেকে, পরবর্তীতে থিয়েটারের বড়বাবু হয়ে ওঠার নাট্যরসসিক্ত এক অপাপবিদ্ধ জীবনের প্রথম চল্লিশ বছরের সঙ্গে আমাদের নিবিড় পরিচয় করায় এই উপন্যাস।
শিশির সমসাময়িক স্বাধীনতাপূর্ব কলকাতার সমাজ ও রঙ্গালয়ের ইতিহাসলব্ধ তথ্যসন্ধান যদি নিতে চান কোন কৌতূহলী পাঠক তবে এই উপন্যাস তার অবশ্যপাঠ্য। আবার যে নিবিড় পাঠক এক আত্মমগ্ন শিল্পীর জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখে হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে তারও এক মায়াময় লেখছবি এই উপন্যাস।
দশটি অধ্যায়ে বিস্তৃত এই সুদীর্ঘ উপন্যাস নাট্যাচার্য শিশির কুমার ভাদুড়ির বাস্তবিকই এক নাটকীয় জীবনের সুবিন্যস্ত উপস্থাপন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশিরের জীবনের চলমানতা, তাঁর একাকীত্ব, একরোখামি, অপমান, প্রেম, বিষণ্নতা, যৌনতা, অবজ্ঞা – সেইসঙ্গে থিয়েটার করার এক দুর্দমনীয় আকুতি সব মিলিয়ে আমরা এই উপন্যাসে যেন এক দীর্ঘ নাট্য অথবা চলচ্চিত্র দেখতে থাকি। কারণ এই উপন্যাসে লেখক গতিময় বাকরীতির স্বাদু প্রভাবকে ব্যঞ্জনাধর্মী ও সরলতায় যেমন মিলিয়েছেন, তেমনি চরিত্রের মনন ও বিশুদ্ধিকে বিশ্লেষণ করতে নিঁখুত ও ঋজু গদ্যের অনপচয়ী ব্যবহার করেছেন।
এই উপন্যাসে অসংখ্য চিত্রকল্পের মধ্যে এক ব্যতিক্রমী জীবনকে কাছ থেকে দেখা গেল। আবার বাংলা পেশাদার রঙ্গালয়ের কালের যাত্রার একফালি তথ্যবহুল ইতিহাসও বিবৃত হল।