নুতন ভোরের প্রতিবেদন : বর্ধমান সদর প্যায়ারা নিউট্রিশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে আজ বর্ধমান শহর জুড়ে পালিত হল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই উপলক্ষ্যে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে স্বপ্রতিষ্ঠিত মহিলাদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। এই সমস্ত মহিলারা লাজ মান ভয় এবং সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্বরোজগারের মাধ্যমে পরিবারের হাল ধরে সমাজে নারী জাগরণের দামামা বাজিয়েছেন। তেলিপুকুর টোটো স্ট্যান্ডে সম্মানিত করা হয় বর্ধমান শহরের টোটো চালিকাদেরকে। প্রথমেই উত্তরীয় ও স্মারক তুলে দেওয়া হয়, এরপর সারা মাসের মুদিখানা বাজার এবং কিছু অর্থসাহায্য করা হয়। বর্ধমান শহরের প্রথম টোটোচালিকা শ্রীমতি সবিতা দাস বলেন উনি আট বছর ধরে টোটো চালাচ্ছেন এবং মূলত মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্যই ওনার এই পেশায় আশা। আজ স্মারক এবং উপহার পেয়ে খুশি টোটোচালিকা স্বান্তনা দাস। একইভাবে আজ সম্বর্ধনা দেওয়া হল সবজি বিক্রেতা কিছু মহিলাদের। ৭০ উর্দ্ধ বধবা মহিলা সুজাতা রায় বলেন ৩২ বছর ধরে উনি সবজি বিক্রি করে সংসার প্রতিপালন করে চলেছেন, এতদিনে সেই লড়াইয়ের স্বীকৃতি পেলেন।
সম্বর্ধনা দেওয়া হল অধুনা ভাইরাল হওয়া মুনমুন দিদিকে যিনি মূলত তাঁর মেয়ের মুখ তাকিয়ে করোনার সময় থেকে সংসারের হাল ধরতে রাস্তার উপরেই খুলে ফেলেছেন মুসুরের রান্নাঘর। সম্বর্ধনা পেয়ে আপ্লুত হয়ে উনি জানান এই উপহার ওনাকে লড়াইয়ের বাড়তি রসদ যোগাবে। সম্বর্ধনা দেওয়া হয় সুনিতা দিদিকে যিনি নিজের মেয়েকে মানুষ করে তোলার জন্য রাস্তায় দইবড়া বিক্রি করে চলেছেন। ওনার ১১ বছরের মেয়ে মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠুক এটাই ওনার প্রার্থনা।
মল্লিকপুকুর বস্তি এলাকায় যে সমস্ত বয়স্ক মহিলারা সংসার সামলাতে বা অসুস্থ স্বামীর সেবা করা ও চিকিৎসার খরচ জোগার করার জন্য এখনও বাসি কাজ করে চলেছেন তাঁদেরও সম্বর্ধনা দেওয়া হয় এবং আত্মরক্ষা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ওনাদের সোসাইটির তরফ থেকে ক্যারাটে প্রশিক্ষন দেওয়া হচ্ছে। ৬০ উর্দ্ধ কৃষ্ণা পোদ্দার বলেন ওনার স্বামী রিক্সা চালাতেন কিন্তু তিন বছর ধরে মারন রোগ ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাই সংসারের হাল ধরতে উনি লোকের বাড়ি কাজ করেন। সোসাইটিকে ওনার জীবন সংগ্রামের পথে পাশে পেয়ে উনি আপ্লুত।
পিয়া পাসোয়ান ৬ মাস হল স্বামীকে হারিয়েছেন। দেড় বছরের একমাত্র সন্তানকে বড় করার জন্য তাই উনি রাস্তার ধারে ঘুগনি বিক্রি করছেন।
ওনার লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে বর্ধমান সদর প্যায়ারা নিউট্রিশন সোসাইটি ওনার মনোবল আরও বাড়িয়ে দিলো বলেই ওনার বিশ্বাস।
সোসাইটির সম্পাদক প্রলয় মজুমদার বলেন এভাবে প্রতিটি লড়াকু মহিলার মনোবল বাড়াতে শহর জুড়ে এমন ৫০ জন মহিলাকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়।
সোসাইটির তরফে উপস্থিত চৈতালি ঘোষ, মনীষা মণ্ডল, ইতি পোড়েল, জয়ী সাহা, দ্যুতি কোনার, শিল্পা অধিকারীরা জানান আমরা নারী আমরাই পারি এই বার্তা সমাজের কাছে পৌঁছে দেবার জন্যই আজকের এই উদ্যোগ।