নিজস্ব প্রতিনিধি : শনিবার বর্ধমানের জামালপুরের সেলিমাবাদ সি বি মাঠে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখতে এসে একথা বলে গেলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।
যে বিধানসভা, ব্লকে আপনারা বিজেপিকে উৎখাত করার ডাকে সাড়া দেবেন, বছর শেষ হওয়ার আগে সেই ব্লকে-গ্রামে রাজ্য সরকার প্রথম কিস্তির টাকা পৌঁছে দেবে। বিজেপির সরকার দিক আর না দিক।
এদিন দুপুরে আড়াইটে নাগাদ এই সভার কথা থাকলেও এদিন অভিষেক আসেন বিকাল ৪ টে নাগাদ। অভিষেক এদিন বলেন,
এই বর্ধমান জেলা বাংলার শস্যভান্ডার। আলু চাষের কেন্দ্রস্থল জামালপুর আর মেমারি। আজকে আলুচাষিরা চাষ করতে গিয়ে বীজ পাঞ্জাব থেকে বীজ আসে। ৩-৪ হাজার টাকা দিয়ে বীজ কিনতে হয়। তার উপর সারের দাম আরও বেড়েছে। ইউরিয়া, পটাশের দাম বেড়েছে। অচ্ছে দিন আসবে বলেছিল দশ বছর আগে। আর সাত দিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১০ বছরে ট্রেলার দেখিয়েছি, এ বার ক্ষমতায় এলে সিনেমা দেখব। আমি মায়েদের, ভাইদের জিজ্ঞাসা করছি, ১০ বছরের ট্রেলারে কী দেখলেন? কেরোসিন, গ্যাসের দাম সহ দাম বেড়েছে বিভিন্ন জিনিসের। এক দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজার টাকা ব্যাঙ্কে দিচ্ছেন। আর মোদী সরকার আধার আর প্যান কার্ডের লিঙ্ক করে সেই হাজার টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বঞ্চনা, শোষণের যোগ্য শিক্ষা দিতে হবে ১৩ মে। অভিষেক বলেন, ১৩ মে দিনটা ঐতিহাসিক। সিপিএমের ৩৪ বছরের অপশাসনের অবসান ঘটিয়ে মা-মাটি-মানুষের সরকার প্রথমবার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৩ মে। আবার আপনাদের ভোটের দিন ১৩ মে। সবাইকে প্রণাম করছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী করার পিছনে পূর্ব বর্ধমান অগ্রণী। ১৬-০ ফল ছিল। আবার প্রত্যেক বিধানসভা থেকে তৃণমূলকে জেতাতে হবে। এদিন জনতার সামনে
তপশীলি সংক্রান্ত বিষয়ে বলেন, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে রাজ্যসভায় এক সাংসদ প্রশ্ন করেছিলেন, তার জবাব হাতে নিয়ে আমি আপনাদের দেখাচ্ছি। কেন্দ্রের সামাজিক ন্যায়বিচার মন্ত্রক, মন্ত্রী রামদগাস আটোয়ালে, সরকারে কে আছে—বিজেপি।
রাজ্যসভায় ওই সাংসদ ২০২৩ সালে প্রশ্ন করেছিলেন, গত পাঁচ বছরে তফসিলি জাতি, উপজাতিদের উপরে মোট অপরাধের ঘটনা কত? জবাবে কেন্দ্র জানিয়েছে, ৪৩ হাজার অপরাধের ঘটনা ঘটেছিল। ২০২০-২১ সালে তার সংখ্যা ৫১ হাজার। পাঁচ বছরে অপরাধের হার বেডে়ছে ২০ শতাংশ প্রতি বছরে। শীর্ষে রয়েছে বিজেপির ডবল ইঞ্জিল সরকার উত্তরপ্রদেশ। তেরো হাজার ঘটনা সেখানে, আর আমাদের ১০৮টা ঘটনা। আগামী দিনে চেষ্টা করব সেটা যেন শূন্য হয়। দ্বিতীয় স্থানে রাজস্থান, তারপরে মধ্যপ্রদেশ। সব জায়গায় কেন্দ্রেও বিজেপি, রাজ্যেও বিজেপি।
এদিন অভিষেক বলেন, অসীম সরকার ভোট চাইতে এলে জিজ্ঞাসা করবেন রাণাঘাট, হরিণঘাটার তপশীলিদের জন্য কী করেছেন আপনাদের সরকার? কোচবিহারে সভা করে বিজেপির এক নেত্রী বলেছেন, বিজেপি জিতলে তিন মাসের মধ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ হয়ে যাবে।
বিজেপির রাজ্য বা সর্বভারতীয় স্তরের কোনও নেতা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, শোকজ করেনি। তাহলে ধরে নেওয়া যাবে কেন্দ্র, রাজ্যের অনুমতি নিয়েই বন্ধ হয়ে যাবে। জেতার পরে আবাসের টাকা এ ভাবেই বন্ধ করেছিল। এরপরই জনতার উদ্দেশ্যে অভিষেক বলেন, আপনারা চান লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ হোক? তাহলে ১৩ মে জবাব দিতে হবে। যত দিন আমাদের সরকার আছে, আমরা বেঁচে আছি আপনাদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কেউ বন্ধ করতে পারবে না। গ্যারান্টি দিচ্ছি, বিজেপি আটকাতে পারবে না।
মোদীর গ্যারান্টি প্রসঙ্গে
অভিষেক বলেন, ১৫ লক্ষ টাকা করে অ্যাকাউন্টে সব লবডঙ্কা। এই হচ্ছে বিজেপির গ্যারান্টি। দেখে সিদ্ধান্ত নিন। কয়েক দিন আগে মোদী বলেছেন,যাঁরা যাঁরা মাছ খান, তাঁরা দেশবিরোধী, হিন্দু বিরোধী।
অভিষেক বলেন, সংবাদমাধ্যমকে বলছি মাছ খাওয়ার হাত তোলার সংখ্যার ছবিটা প্রকাশ করুন। কী খাব, কী পরব, কী ভাবে চলব, কাকে ভালবাসব ঠিক করবে বিজেপি আর প্রধানমন্ত্রী! এই অধিকার আপনারা বিজেপিকে দিতে চান? বিজেপির ইস্তাহারে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, কর্ম সংস্থান নিয়ে একটাও কথা নেই। বলা আছে, এক দেশ এক ভোট করব। জানেন এটা কি? পাঁচ বার ভোট দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেবে। পাঁচ বছরে এক বার ভোট দেবেন। সংবিধান বদল করতে চায় এরা। হুংকার দিয়ে অভিষেক বলেন, দু’দফায় ভোট হয়েছে। বাংলার উপরের জেলায় বাড়িতে ঢুকে সার্জিকাল স্ট্রাইক করেছি। মাথা ভেঙেছি, তারপরে ঘাড় ভেঙেছি। এ বার কোমর ভাঙব। ১৩ তারিখ পা আপনারা ভাঙবেন।
হাঁটু ভাঙবেন। সপ্তম দফা আমার ভোট, ডায়মন্ডহারবার। যেটুকু রয়েছে গণতান্ত্রিক ভাবে চূর্ণ করে ৪ তারিখ ভোটবাক্স খুললে দেখা যাবে, বল হরি হরি বোল, বহিরাগতদের খাটে তোল।
অভিষেক বাবু আরো বলেন, গরমে চেয়েছিলাম তাড়াতাড়ি ভোট হোক। এরা মানুষকে অত্যাচার করতে চায়। বাংলার মানুষের সঙ্গে বৈমাতৃসুলভ ব্যবহার করে। আপনাদের একটা ভোটের অনেক দাম। নিজের অধিকার সামনে রেখে ভোট দিন। কষ্ট হলেও লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে হবে। এখানে বোতাম টিপলে দিল্লিতে ভূমিকম্প হবে। একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসকে ভয় পায় এরা। আমার মা-বাবা, স্ত্রী কাউকে ছাড়েনি।