১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Advertisement

নাট্য আন্দোলনের প্রাণপুরুষ পৃথ্বীশ রাণা

নূতন ভোরের প্রতিবেদন : নাট্য আকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত, পৃথ্বীশ রাণা নাট্য জগতের একজন স্বনামধন্য প্রাণপুরুষ। খুব ছোট বয়সে নাটক চর্চায় হাতেখড়ি হলেও ২০০৯ সালের শেষকালে কালিন্দী ব্রাত্যজন নাট্যদলে যোগদান করেন। নাট্যগুরু ব্রাত্য বসুর অভিভাবকত্বে ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রযোজনায় মঞ্চ পরিকল্পনা, আলোক পরিকল্পনা বা কারিগরি সহায়তা ইত্যাদি বিভাগে নিজের শৈল্পিক চেতন ও নৈপুণ্যের প্রকাশ ঘটান।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

পৃথ্বীশ রাণা মঞ্চ পরিকল্পক বা আলোক পরিকল্পক হিসেবে ক্যানভাসার, ব্যোমকেশ, জায়মান, আনন্দীবাই, চন্দ্রগুপ্ত, হাজু মিঁঞার কিস্ সা, পদ্মগোখরো, তক্ষক, য্যায়সা কা ত্যায়সা, চিরকুমার সভা, হড়পা বান, হাঁসুলী বাঁকের উপকথা, অথৈ জল, জতুগৃহ, কাঁকড়া, মুম্বাই নাইটস্, অমূল্যর ডায়েরি, মেঘে ঢাকা তারা, বোমা, পড়ে পাওয়া ষোলো আনা, তিন তস্কর, ভয়, অরণ্যদেব, দেবদাস, বিবর, উলঙ্গ প্রজা পরিহিত রাজা, ট্যাঙ্কি সাফ, গিরিগিটি, নাসিকা পুরাণ, আলাউদ্দিন ও পদ্মাবতী, পিতৃভূমি, বিনয়ের জীবন প্রভৃতি। এছাড়াও বিভিন্ন নাটকে নিজের কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করেন।

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

ছোটদের নিয়ে থিয়েটারের কাজ করেছেন বেশ কিছু। যেমন তাসের দেশ, লক্ষ্মণের শক্তিশেল, চাঁদের পাহাড়, ডমরু চরিত কথা, ভোম্বল সর্দার, পান্ডব গোয়েন্দা প্রভৃতি নাটক।

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

কারিগরি সহায়ক হিসেবে কাজ করেছেন চেনা দুঃখ চেনা সুখ, সিনেমার মতো, কে?, অপারেশন ২০১৪, আলতাফ গোমস্, অদ্য শেষ রজনী, ২১ গ্রাম, পাঁচের পাঁচালী, মীরজাফর প্রভৃতি নাটকে।

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অধীনস্থ মিনার্ভা নাট্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রে বেশ কিছু বছর কো-অর্ডিনেটর পদে চাকরি করেন পৃথ্বীশ রাণা।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

পৃথ্বীশের তুখোড় সম্পাদনা ও নির্দেশনায় ইতিমধ্যেই ৫৫টি শো হাউস ফুল নাটক ‘বাদাবন’ দর্শকদের মনে গভীর দাগ কেটে গিয়েছে। পৃথ্বীশ রাণার মুখোমুখি উদার আকাশ পত্রিকা ও উদার আকাশ প্রকাশনের সম্পাদক ফারুক আহমেদ।

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

প্রশ্ন: আপনার শৈশব, স্কুল, কলেজ থেকে এই নাট্যজগতে আসার প্রেক্ষাপটটা যদি তুলে ধরেন।

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

উত্তর: দেখুন, শুধু শৈশব নিয়ে বলতে গেলেই তো আমাদের কত কিছু বলার থাকে। আর এই বয়সে এসে যেন আরো বেশি করে থাকে। আসলে, স্মৃতির ঝাঁপি উপুড় করলে কোন পরশপাথর তুলবো, আর কোনটা কুড়োবো না, বুঝতে পারা যায় না। তার ওপর স্কুল – কলেজ!! থিয়েটার!! প্রায় মহাকাব্যের মতো বিষয়কে আপনি সনেটে বলতে বলছেন। তবুও ওই ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেটুকু বলা যায়, সেটুকুই বলছি। আমার ছোটবেলা কেটেছে হাওড়ায়, লেদ কারখানা আর চটকলের শহরে। স্কুল…., কলেজ…..। আর এরই মাঝে টুকটাক থিয়েটার করা। আর পাঁচজন বাঙালির যেমন পাড়ার নাটকেই হাতে খড়ি হয়, আমারও বলতে পারেন সেভাবেই শুরু। তার পরে চাকরি। তারপর ম্যানেজমেন্ট পড়া। দিল্লি চলে যাওয়া। আবার কলকাতায় ফেরা। তবে, একটা মজার গল্প আপনাকে বলি। বলতে পারেন যে কোনো শুরুরও তো একটা শুরু থাকে। ধরুন, আমার থিয়েটারে আসার প্রেক্ষাপট সেটাই। তখন আমি কলকাতায় ফেরার পরে সেক্টর ফাইভে একটা বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি করি। ওই রক্তকরবীর ৪৭ফ, ৬৯ঙ হয়ে গলায় আই কার্ড ঝুলিয়ে অফিস যাই। কখনও ডে, কখনও নাইট শিফট। সেইসময় হাওড়া থেকে দ্বিতীয় হুগলী সেতু ধরে এত বাস বা গাড়ি সহজে পাওয়া যেত না। কিছু শাটল ট্যাক্সি আসতো এক্সাইড পর্যন্ত। নাহলে ম্যাটাডোর, দুধের গাড়ি, তাতে দশটাকা দিয়ে উঠে পড়া। সেটা সম্ভবত ছিল জুলাই মাস। গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে সেদিন প্রবল বৃষ্টি নেমেছিল। গোটা হাওড়া-কলকাতা প্রায় জলের তলায়। কিন্তু সেদিনও আমার নাইট শিফটে ডিউটি ছিল। প্রাইভেট চাকরি, বুঝতেই পারছেন, কোনো ছুটি নেই। বৃষ্টিটা একটু ধরতেই বেরিয়ে পড়েছিলাম বাড়ি থেকে। সেই একটা ম্যাটাডোর ধরে কোনোরকমে এক্সাইডের মোড়। তারপর কীভাবে যাব জানি না। প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত গোটানো। জুতো হাতে। জল ঠেলে একটু এগিয়েছি, আবার ঝেঁপে নামলো বৃষ্টি। পাগলের মতো বৃষ্টি, সামনের ফুটপাতটাও ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। আমাকে ওর মধ্যে অফিস যেতেই হবে। আমার মাথার ভেতর তখন খেলা করছে টার্গেট, অফিসের ফর্ম্যালিটি। এদিকে গোটা অঞ্চলে যত দূর চোখ যায় একটা প্রাণী পর্যন্ত নেই। আমার কী হল কে জানে, সেই বৃষ্টিতে আমি ভিজতে লাগলাম। আর হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলাম। কোন ক্লান্তি, জীবনের প্রতি কোন অভিমানে আমি জানি না। কিন্তু আমি কাঁদছিলাম। এদিকে বৃষ্টিও বাঁধ মানছে না, আমার চোখের জলও থামছে না। হঠাৎ, মনে হল কে যেন ভেতর থেকে বলছে, ‘পৃথ্বীশ এভাবে আর নয়’। আমিও কোন মায়াবলে জানি না, রাস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়ালাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, হয় অফিস না হয় বাড়ি– যেদিকের গাড়ি আগে আসবে সেদিকে রওনা দেবো। একটা সাঁত্রাগাছি যাবার শাটলই আগে এলো। উঠে পড়লাম। সেই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিলাম, ছেড়ে দেবো চাকরিটা। রাত দু’টোয় গিয়ে নেমেছিলাম সাঁত্রাগাছি। ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরছি। একবার ভাবছি চাকরি তো ছাড়বো, কিন্তু তারপর? আবার ভাবছি, এই একঘেয়ে জীবন থেকে বেরোনোর এটাই সুযোগ। অত রাতে বাড়ি পৌঁছে মাকে বলেছিলাম, ছেড়ে দিলাম চাকরি। আর তার ক’দিনের মধ্যেই একটি নাট্যদলে লোক নেবার জন্য বিজ্ঞাপন বেরোয়। কোনো কিছু না ভেবে সেখানে চলে যাই। ব্যস, সেই থেকেই জড়িয়ে যাওয়া থিয়েটারের সঙ্গে। তারপর থেকে থিয়েটারই আমার ধর্ম হয়ে ওঠে।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

প্রশ্ন: সাহিত্য সংস্কৃতির সেবায় অনন্য নিদর্শন আপনার পরিচালনায় মঞ্চ কাঁপানো নাটক ‘বাদাবন’ নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতার কথা যদি আমাদের বলেন।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

উত্তর: অভিজ্ঞতার ঝুলি তো রোজই একটু একটু করে পূর্ণ হচ্ছে। আসলে, যেদিন বাদাবনের পরিকল্পনা হয়েছিল, স্ক্রিপ্ট পড়া হয়েছিল, তার ঠিক ছ’দিন আগে আমার হার্টে চারটে স্টেন্ট বসেছিল। আশঙ্কা ছিল এই শরীরে কাজটা করতে পারব কিনা। সারাক্ষণ পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন আমার স্ত্রী ভূমিকা। নিমার্ণের ভাঙা গড়া শুরু হয়েছিল – সেগুলোর মধ্যে দিয়ে নতুন কোনো না কোনো অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই তো গেছি। এখনো যাচ্ছি। আসলে, একটা থিয়েটার তো রোজ জন্মায়, রোজ শেষ হয়, পরের দিন আবার তার নতুন জন্ম। এটা একটা দীর্ঘ প্রসেস। চলতেই থাকে। এবার দেখবেন, জীবন যেমন কিছু কিছু স্মৃতি তুলে রাখে, আগলে রাখে – এই নির্মাণ আর সৃষ্টির অভিজ্ঞতাও তেমন। সব শেষ হলে পিছু ফিরে দেখতে হয়, বুঝে নিতে হয় ভালো আর মন্দের অভিজ্ঞতা। বাদাবন তো ৫০ পেরিয়েছে। আরো পথ হাঁটা বাকি। বরং যখন বাদাবন তার শেষ শো’টা করবে, তার পরের দিন আমি বলতে পারবো বাদাবনের অভিজ্ঞতা। এখন কিছু বললে সেটা অর্ধেক বলা হবে। কারণ আমি তো জানিই না, বাকি পথে আর কী কী অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করে আছে।

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

প্রশ্ন : একজন নাট্য আন্দোলনের কর্মী হয়ে এই সময়ে উল্লেখ্য দাগ কেটে গিয়েছে এমন কয়েকটি কাজ নিয়ে যদি কিছু বলেন আমাদের।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

উত্তর: প্রথমত, আমার নাট্যকর্মী শব্দে বিশ্বাস নেই। আমি নিজের পরিচয় নাট্যধর্মী হিসেবেই দেওয়া পচ্ছন্দ করি। দ্বিতীয়তঃ আন্দোলন শব্দে আমার আপত্তি আছে। আমি থিয়েটার করি নিজস্ব তাড়নায় এবং কারণে। সমাজ বদলাব, সামাজিক উদ্যোগ, দিন বদলানোর স্বপ্ন নিয়ে যাঁরা থিয়েটার করেন তাঁরা আমার প্রণম্য। আমি বিশ্বাস করি Art is a very personal talk.. থিয়েটার আমার জীবনে খুবই ব্যক্তিগত, অনেকটা প্রেমিকা গোছের।

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

প্রশ্ন: আপনার সংগ্রামী জীবনের অন্বেষণ লেখালিখি পড়া-বাংলা নাটকের জন্য আপনার পরবর্তী সময়ে কী ভাবনা মাথায় আছে?

 

Advertisement

 

 

Advertisement

উত্তর: বাংলা থিয়েটার নিয়ে প্রথম যে ভাবনাটা আছে, তা হল থিয়েটারকে সম্পূর্ণ স্বনির্ভর করা। আপনি দেখবেন, অধিকাংশ লাইভ পারফরম্যান্স কী চূড়ান্ত কমার্শিয়াল। থিয়েটার সেখানে এখনো অনুদান নির্ভর। এই সত্যিটা তো অস্বীকার করার জায়গা নেই। মেনে নিলাম, থিয়েটার মাইনোরিটি আর্ট, কিন্তু তাই বলে থিয়েটার কেন এত পিছিয়ে থাকবে? একটা সময় তো এই কলকাতায় বোর্ড থিয়েটার বুক বাজিয়ে ব্যবসা করেছে। এইবার অনেকেই বলবেন, সেই সময় টেলিভিশন, নেট, ওটিটি ছিল না। কিন্তু এগুলো তো এখন আছে, তাতেও কি ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স বন্ধ হয়েছে? তাহলে? আমার মাথার মধ্যে অনেক ভাবনাই আছে। তার মধ্যে একটা আপনাকে বলি। ধরা যাক, একটি দৃশ্য, একটি ছেলে ঘুম থেকে উঠে অফিস বেরোবে। আচ্ছা, আপনি-আমি ঘুম থেকে উঠে কী করি? ব্রাশ করি। ধরা যাক, মঞ্চে দেখা গেল ছেলেটি ঘুম থেকে উঠছে। এরপরই পর্দায় প্রোজেক্টরের সাহায্যে দেখানো হল, ছেলেটি টুথপেষ্ট লাগালো ব্রাশে। বেসিনের সামনে র‍্যাকে আরো অনেক প্রোডাক্ট। এইবার এই টুথপেষ্ট কোম্পানিকে আমি প্রোমোট করছি থিয়েটারে, মানে তার বিজ্ঞাপন করছি। তাহলে সেই টুথপেষ্ট কোম্পানির প্রচারের টাকা ঢুকবে প্রযোজনায়। সঙ্গে আরও কিছু প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন অনুযায়ী টাকা। তাহলে? এভাবেই অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করা যায় থিয়েটারকে। এইটা একটা উদাহরণ। প্লাস…না, এখনই সব বলবো না। ক্রমশ প্রকাশ্য।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

প্রশ্ন: বাংলা জুড়ে ‘বাদাবন’ এই মুহূর্তে বহু চর্চিত এবং দাগ কেটে যাওয়া নাটক। নির্দেশনার জন্য অনুপ্রেরণা কোথা থেকে পেলেন যদি শেয়ার করেন?

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

উত্তর: দেখুন, ‘বাদাবন’ আমার থিয়েটারে প্রথম নির্দেশনা নয়। মিনার্ভা রেপার্টারির থেকে মনোজ মিত্র’র ‘মহাবিদ্যা’, কালিন্দী ব্রাত্যজনের হয়ে পরশুরামের সরলাক্ষ হোম অবলম্বনে ‘গ্যাং’, বাদল সরকারের শনিবার অবলম্বনে ‘ও স্বপ্ন..!’, তারপর বাদাবন। তাই,বাদাবনের নির্দেশনার ক্ষেত্রে আলাদা করে কোনো অনুপ্রেরণা হয়তো পাই নি। তবে, আপনি যদি খেয়াল করেন, দেখবেন আমার নির্দেশনার ক্ষেত্রে কখনো লেখা থাকে ‘A to Z ব্রাত্য বসু’, বাদাবনের ক্ষেত্রে আমরা বলেছি ‘বনস্পতির ছায়া দিলেন – ব্রাত্য বসু’। তাই, আলাদা করে কারো নাম বলতে বললে আমি স্যারের নামই বলবো। উনিই আমাকে দু-দু’বার নির্দেশনা দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। অনুপ্রেরণা বললে অনুপ্রেরণা, গুরুদক্ষিণা বললে গুরুদক্ষিণা..।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

প্রশ্ন: ওপার বাংলা থেকে আমন্ত্রণ এলে ‘বাদাবন’ কি দেখার সৌভাগ্য হবে সাকিবের দেশের মানুষের?

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

উত্তর: আমি এবং আমার টিম ভীষণই আগ্রহী। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান। জানিয়ে রাখি ইতি মধ্যেই ‘বাদাবন’ নাটকের বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছি। তারিখ এখনও স্থির হয়নি। আর বাংলাদেশের দর্শকদের যদি নাটকটি দেখাতে পারি, সে সৌভাগ্য আমাদেরও।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

প্রশ্ন: নাটকের জন্য জীবনের অনেক সময় দিয়েছেন, এবার কি কলম ধরছেন আত্ম-জীবনের কথা তুলে ধরতে?

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

উত্তর: শক্তি চট্টোপাধ্যায় একটি কবিতায় বলেছিলেন – “একটি জীবন পোড়ে, শুধুই পোড়ে / আকাশ, মেঘ, বৃষ্টি এবং ঝড় / ফুলছে নদী যেন তেপান্তর / চতুর্দিকে শীতল সর্বনাশে”। আমার জীবনে আগে আকাশ, মেঘ, বৃষ্টি ঝড়ে পুড়ুক, নদী আরও ফুলে তেপান্তরে যাক, সর্বনাশ আরো শীতল হোক.., তারপর না হয় ভাববো আত্মজীবনী লিখবো কিনা..। আর আমার ধারণা বায়োগ্রাফিতে তাও কিছু সত্যি কথা লেখা থাকে, অটোবায়োগ্রাফিতে নয়। তবে কিছু ব্যতিক্রম নিশ্চই আছে।

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

প্রশ্ন: এখন কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে মানুষ জীবন অতিবাহিত করছেন। শান্তিতেই মানুষ বাঁচতে চায়, একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই চায়, কিন্তু হাজারো আতঙ্কের মধ্যে এখন বড় আতঙ্ক তাদেরকে তাড়া করছে এন আর সি। করণীয় কী?

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

উত্তর: রাষ্ট্র যেখানে ‘সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী’র মত আচরণ করে সেখানে এই আতঙ্ক তো প্রত্যাশিত। সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য নেতিবাচক এবং অযৌক্তিক প্রতিক্রিয়া দেখানো বন্ধ হওয়া উচিৎ। অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা; যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই-প্রীতি নেই-করুণার আলোড়ন নেই, পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া। করণীয় কি বলতে পারব না। কারণ আমি কেউকেটা নই, আমার হাতে তো রাষ্ট্রক্ষমতা নেই। তবে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলতে পারি, আমাদের ভাবা উচিৎ – আজ যদি প্রতিবেশীর সঙ্গে হয়, আগামীকাল আমার সঙ্গেও ঘটতে পারে। পাশে দাঁড়ানোটা খুব জরুরি।

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

প্রশ্ন: নতুন প্রজন্মের কাছে নাটক পৌঁছে দিতে এবং বাংলাদেশের মতো জনপ্রিয় নাটক পরিবেশন করতে এপার বাংলাতে আপনার মতে কোন পথ অবলম্বন করতে হবে?

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

উত্তর: প্রথম কথা থিয়েটার নিতান্তই মঞ্চের বিষয়। বাংলাদেশে ইউটিউবে নাটক বলে যাকে বলা হয়, তা কখনোই থিয়েটারের ব্যাকরণের সঙ্গে মেলে না।আমি তাতে বিশ্বাসীও নই। হ্যাঁ, কিছু সিনে প্লে হয়তো হয়েছে, সেটা আমেরিকায় গত শতকের চারের দশকেই হয়ে গেছে। মঞ্চের থিয়েটারকে ক্যামেরা দিয়ে ধরা এবং বাঁধা। টেলিভিশনেও এই রকম কাজ বহু হয়েছে। আমাদের দল ‘কালিন্দী ব্রাত্যজন’ থেকেই অন্তত ডজন খানেক হয়েছে। এখন মিডিয়াম বদলেছে। সেটা ইউটিউব কন্টেন্ট হয়েছে। কোভিডকালে আমিও ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু এমন কাজ করেছি। সেটা কেবল থিয়েটার চর্চাটুকু বজায় রাখার জন্য। ব্যস। আমি এখনো বিশ্বাস করি, থিয়েটারের বেঁচে থাকে মঞ্চে, স্পেসে, লাইভ পারফরম্যান্স-এর মধ্যেই। নতুন প্রজন্মকে সেইদিকে নিয়ে আসাই আমাদের মতো নাট্যধর্মীদের কাজ হওয়া উচিত। হয়তো প্রসেনিয়াম থিয়েটার অন্য স্পেস থিয়েটারে আঙ্গিকগত ভাবে বদলাতে পারে, দুটো বিষয় একই সঙ্গে পাশাপাশি চলতেও পারে। কিন্তু এর বাইরে যাকে থিয়েটার বলে চালানো হয়, আমি তাকে থিয়েটার হিসেবে মানতে নারাজ।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

প্রশ্ন: আপনার কাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখলাম বেশিরভাগই অভিনয় করেছেন নতুন প্রজন্মের একদম নতুন মুখ। তাদেরকে কীভাবে আবিষ্কার করলেন?

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

উত্তর: ঠিক আবিষ্কার নয়, বরং বলতে পারেন এটা কোথাও আমার নাট্য অভ্যেস কিংবা নাট্যযাপনের সঙ্গেই সম্পৃক্ত। মিনার্ভা রেপার্টারির কো-অর্ডিনেটর থাকার সময়েই আমি এক ঝাঁক নতুন মুখের সঙ্গে কাজ করি। সেই অভিজ্ঞতাই হয়তো আমাকে বাদাবনে নতুন মুখের সঙ্গে কাজ করতে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করেছে। প্রসঙ্গতঃ বলি, ‘বাদাবন’ যেহেতু একটা রেপার্টরিরই প্রযোজনা (দক্ষিণ দমদম সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র), আমরা চাইলে প্রথিতযশা, খ্যাতনামা অভিনেতাদের নিতে পারতাম। কিন্তু আমি নির্দেশক হিসাবে এই তরুণ ব্রিগেডের ওপরই ভরসা করেছিলাম। এবং আমার ধারণা এঁরা আমার ভরসার মর্যাদা রাখার চেষ্টা করেছে। শুধুমাত্র অভিনেতারা নন, নেপথ্য শিল্পী হিসেবে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁরাও বাংলা থিয়েটারে এইসময়ের আলোচিত নাম।

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

প্রশ্ন: আপনার কাজের স্বীকৃতি এসেছে, কি কি পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছে আপনার মূল্যবান সব কাজের জন্য?

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

উত্তর: এটা কিছুটা নিজের ঢাক নিজে পেটানো গোছের হয়ে যাবে। তাও যখন প্রশ্নটা এলো বলি -পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধীনস্থ মিনার্ভা নাট্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রে বেশ কিছু বছর কো-অর্ডিনেটর পদে চাকরি করেছি। সামান্য কিছু সম্মাননা পেয়েছি কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার থিয়েটার দলগুলি থেকে। তার মধ্যে হাওড়া ব্রাত্যজন সম্মান, নবীন নির্দেশক সম্মান- চণ্ডীতলা প্রম্পটার, শ্রেষ্ঠ নেপথ্য শিল্পী-মাণকুন্ডু সৃষ্টি আকাদেমি, শ্রেষ্ঠ নেপথ্য শিল্পী আলোক ও মঞ্চভাবনা- হালিশহর সানডে ক্লাব, ধ্রুপদ নাট্য সম্মান-শ্রীরামপুর, দমদম ব্রাত্যজন সম্মান, স্বপ্নদর্শী সম্মান, শ্রেষ্ঠ শিল্পী মঞ্চ ভাবনা-বালিগঞ্জ রেনবো থিয়েটার সম্মান, বিজন ভট্টাচার্য স্মারক সম্মান – নাট্যায়ুধ, হাওড়া নাট্যজন সম্মান, আগরপাড়া থিয়েটার পয়েন্ট সম্মান, যাদবপুর মন্থন সম্মান, অশোকনগর প্রতিবিম্ব সম্মান, গোবরডাঙা শিল্পায়ন সম্মান, রমাপ্রসাদ বণিক স্মারক সম্মান -পূর্ব-পশ্চিম, থিয়েলাইট সম্মান, ধূমকেতু পত্রিকা সম্মান ইত্যাদি। আর গত বছর পেয়েছি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর প্রদত্ত নাট্য আকাদেমি পুরস্কার। এই আর কি!

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

প্রশ্ন: চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসেবে কবে পাওয়া যাবে আপনাকে?

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

উত্তর: ছবি করার ইচ্ছে প্রবল ভাবে আছে। কিন্তু এখনই বলা যাচ্ছে না। সময় আসুক। এটা না হয় সময়ের ওপরই ছেড়ে দেওয়া যাক। তবে বাই দ্য বাই -আমি তিনটে শর্ট ফিল্ম করেছি। জীবনে ইচ্ছে আছে কমার্শিয়াল ছবি অন্তত ৬-৭টা করব।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

প্রশ্ন : সমাজের মানুষের কথা তুলে ধরতে আপনি উপন্যাস লিখতে কলম ধরেছেন কি?

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

উত্তর: সত্যি কথা বলতে কি, তার জন্য যে পরিমাণ পড়াশোনা করতে হয় এখনও করে উঠতে পারিনি। আমি এখনও শিশিক্ষু। প্রত্যহ কিছু না কিছু শিখছি। তেমন কিছু ভাবি নি। দেখা যাক। যদি ভেতর থেকে তেমন সাড়া পাই নিশ্চই লিখবো।

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

প্রশ্ন : আপনি এই মুহূর্তে বাংলা থিয়েটারে চর্চিত একটি নাম। নতুন প্রজন্মের যারা থিয়েটার করতে আসছেন তাদের উদ্দেশে কি বার্তা দেবেন?

Advertisement

 

 

Advertisement

 

 

Advertisement

 

উত্তর: ফুসফুসে দম রাখা খুব দরকার। দ্বিতীয়তঃ মাথায় রাখতে হবে এইখানে যন্ত্রনা, অপমান অনেক কিছু পাওয়া যায়। তৃতীয়তঃ হেরে গেলে চলবে না, অদম্য জেদ আর দাঁতে দাঁত চেপে টিঁকে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে দিনের শেষে দর্শকই রায় দেবেন। আর আমার ধারণা বাংলা থিয়েটার সেই দিন সাবলম্বী হবে যেদিন শ্বশুরবাড়ির লোকজন যেমনটি বলেন আমার জামাই ডাক্তার, ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ সরকারি বা বেসরকারি কর্মচারী অথবা ইঞ্জিনিয়ার, তেমন ভাবেই গর্বের সঙ্গে বলতে পারবেন আমার জামাই থিয়েটার করে। আমার শ্বশুর-শাশুড়ী আজকাল এইটা বলছেন। আর আমার স্ত্রী ভূমিকা – ‘আমার স্বামী থিয়েটার করেন’ বলছেন বহু বছর ধরে (অট্টহাসি)।

Advertisement