পাপিয়া বারুই :দেশের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিকল্প হিসেবে এখনো সেভাবে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। অন্যদিকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলির কাছে জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে কয়লা পুড়িয়ে পরিত্যক্ত ছাই এর উৎপাদন। সেই ছাই এবার আশীর্বাদ হয়ে সব সমস্যার সমাধান করতে চলেছে। হয়তো এবার সেই প্রবাদই সত্যি হচ্ছে যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন! এ নিয়ে শুক্রবার ডিভিসির মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের অডিটরিয়ামে একটি সচেতনতা সেমিনার অনুষ্ঠিত হলো।
এখানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিশেষজ্ঞ ব্যাক্তিবর্গ। ছিলেন বিভিন্ন উদ্যোগ পতি, যারা এই প্রকল্প থেকে ছাই নিয়ে সিমেন্ট, ইট, ব্লক, টাইলস, এ্যাসবেস্টার ছাউনি ইত্যাদি তৈরি করছেন। এছাড়াও ছিলেন যারা ছাই ব্যবহার করতে ইচ্ছুক সেইসব ব্যবসায়ীরাও। মেজিয়া বিদ্যুৎ প্রকল্পের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুধীর কুমার ঝা বলেন, একসময় ছাই আমাদের মাথাব্যথার কারণ ছিল। ছাই রাখার জায়গা পাচ্ছিলাম না আমরা। ৭০০ একরের দুটি ছাই পুকুর রয়েছে এখানে। কিন্তু সেই পুকুর ভরে উঠেছে। কিন্তু ছাই এখন আমাদের মুনাফা দিচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন কয়লা পুড়িয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তা থেকে দু ধরনের বর্জ্য ছাই তৈরি হয়। একটি ড্রাইভ অ্যাস বা শুষ্ক ছাই ও অন্যটি সিক্ত বা ভেজা ছাই। শুষ্ক ছাই দিয়ে তৈরি হয় ইট, সিমেন্ট, ব্লক, টাইলস ইত্যাদি এবং ভেজা ছাই কাজে লাগে পরিতক্ত কয়লাখনি ভরাট ও রাস্তা তৈরির কাজে এবং কিছুটা কৃষিক্ষেত্রে। সুধীর কুমার ঝা বলেন, যেসব উদ্যোগপতি ইট, টালি, ব্লক তৈরির কারখানা করেছেন তাদের আমরা বিনা পয়সায় শুষ্ক ছাই দিই। যারা এই ছাই দিয়ে সিমেন্ট, দামি দামি ফ্লোর টাইলস ইত্যাদি করছেন তাদের কাছে এই ছাই বিক্রি করছে কর্তৃপক্ষ। ই টেন্ডার এর মাধ্যমে দরপত্র ডেকে তাদের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের এমএসএমই মন্ত্রকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সীতানাথ মুখোপাধ্যায় স্লাইড শো এর মাধ্যমে শুষ্ক ছাই থেকে কি কি উৎপাদন হয় শুষ্ক ছাই নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের কি নীতি রয়েছে তা উদ্যোগ পতিদের কিভাবে সাহায্য, সহযোগিতা ও গাইড করা হয় তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেন, ইন্ডিয়ান ফ্লাই অ্যাশ হল ক্ষারীয়, তাই মাটির গুণমান উন্নত করে। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার অভিজিৎ কর বলেন, মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে পড়ে শুষ্ক ছাই থেকে ইট, টালি, এ্যাসবেস্টার তৈরির কারখানা গুলি। আর এই মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রিতে পশ্চিমবঙ্গ সারাদেশে ১ নম্বরে। এদিন তিনি ছাই ইট ও মাটি পুড়িয়ে তৈরি লাল ইটের পার্থক্য ও গুনাগুন নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি জানান, ভারতবর্ষের মধ্যে পূর্ব ভারতে সবথেকে বেশি রয়েছে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প। সে কারণে প্রতি বছর পরিত্যক্ত ছাই এর উৎপাদন হয় ১৬০ মিলিয়ন টন।এই ছাই ব্যবহারে জোর দিয়েছে রাজ্য সরকার। তিনি জানান, তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ১০০ কিমির মধ্যে সরকারি যে সমস্ত নির্মাণ কাজ হবে তাতে ছাইয়ের ইট, টালি, ব্লক ব্যবহারের নির্দেশিকাও রয়েছে রাজ্য সরকারের।
তিনি বলেন, ছাই ইট হল পরিবেশ বান্ধব, দূষণ রোধক, অত্যন্ত সস্তা, হালকা হওয়ায় বহুতল নির্মাণে উপযোগী, লাল ইটের চাইতে অনেক গুণ শক্তিশালী, জল কম লাগে, কৃষিক্ষেত্রে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে, সিমেন্ট কম লাগে, বাড়ি তৈরীর পর তাপমাত্রা রোধ করে, সিপেজ হয় না, অন্যদিকে লাল ইট তৈরিতে যে মাটি লাগে তা পূরণ করতে দেড়শ বছর সময় লাগে। এতে কৃষিজমি কমিয়ে দিচ্ছে। জমির উর্বরতা হ্রাস করছে। তিনি বলেন, লাল ইট তৈরিতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে মারাত্মক ভাবে। একটি পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেন, ১০ হাজার ইট পোড়ানো হলে বাতাসে ১ লাখ ঘন মিটার কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিশ্রিত হয়। তিনি জানান, ছাই থেকে তৈরি জিনিসের ব্যবহারে জোর দিতে হবে।
এর জন্য আরও সচেতনতা শিবির প্রয়োজন। এখনো পর্যন্ত লাল ইটের বাজারে ৩০ শতাংশ মার্কেট ধরতে পেরেছে ছাই ইট। এটাকে আগামী ২ বছরে ৭০ % করতে হবে। এদিন মেজিয়া বিদ্যুৎ প্রকল্পের ডিজিএম প্রবীর কুমার চাঁদ বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে ছাই এর ব্যবহার অত্যন্ত উপযোগী। আমাদের এখান থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে দেখা গেছে কৃষিজমিতে হালকা ছাই ব্যবহার করলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। ফসলের ফলন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। ফলে ছাই নিয়ে এলাকাবাসীর দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।