ফারুক আহমেদ : দেশভাগের পর এপার বাংলার সংখ্যালঘু মুসলমানদের অবস্থা খুবই করুণ ছিল। সেই অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে নানারকমের কায়িক শ্রম ও ছোট ছোট ব্যবসার মাধ্যমে কেউ কেউ একটু-আধটু আর্থিকভাবে সক্ষম হয়। কিন্তু শিক্ষাদীক্ষায় তাঁদের অবস্থান ছিল একেবারে তলানিতে। সেই অবস্থার বদল শুরু হয় আটের দশকে এবং এই পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা নেয় মোস্তাক হোসেন। অফুরন্ত সময় ও উদার হাতে অর্থ দিয়ে মোস্তাক হোসেন সাহায্য করেন আল-আমীন মিশনকে। পরবর্তীকালে এরই প্রভাবে অন্যান্য মিশন স্কুল গড়ে উঠেছে মোস্তাক হোসেন-এর আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে। এই মিশন আন্দোলনে শিল্পপতি মোস্তাক হোসেনের সোনালি পৃষ্ঠপোষকতার ফলেই বাঙালি মুসলিম সমাজ এগিয়ে আসছে। তাঁর ছত্রছায়ায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকলেই উপকৃত হয়েছেন এবং নিয়মিত হচ্ছেন। স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে পশ্চিমবাংলার অনগ্রসর মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষা প্রসার ঘটাতে বসন্ত এনে দিয়েছেন মোস্তাক হোসেন। বর্তমানে মুসলিম দরদী সহমর্মী মোস্তাক হোসেনকে অনুসরণ করে নতুন প্রজন্ম উঠে আসুক সমাজকল্যাণে। অনুপ্রেরণা অবশ্যই মোস্তাক হোসেন। মামুন ন্যাশানাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হলেন বক্তা সম্রাট গোলাম আহমদ মোর্তজা। জি ডি স্টাডি সার্কেলের পরিচালনা সমস্ত মিশন স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম মিশন স্কুল হচ্ছে মামুন ন্যাশানাল স্কুল। ইতিমধ্যে জি ডি স্টাডি সার্কেলের উদ্যোগে সরকারি চাকরির উপযুক্ত করে তুলতে কোচিং দিয়ে বড় সাফল্য লাভ করেছে। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি দফতরে নতুন প্রজন্ম যোগ্যতা প্রমাণ করে চাকরি পাচ্ছেন। মোস্তাক হোসেন ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করছেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন পিছিয়ে পড়া সমাজের একটা অংশ। কয়েক শত মিশন স্কুল গড়ে উঠেছে সরকারি সাহায্য ছাড়াই পশ্চিমবাংলায়। মেস্তাক হোসেন পথিকৃৎ হিসাবে কাজ করেছেন। সঙ্গে বহু সহৃদয় মানুষ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসছেন মিশন স্কুল গড়ে তুলতে। আর্দশ ভারতীয় নাগরিক হিসেবে মানুষ গড়ার কারিগরদের জানাই কুর্নিশ।
প্রাককথন
পথচলা শুরু বিশ শতকের চল্লিশ দশকে। পারিবারিক সচ্ছলতা ছিল, জমিজমা ছিল বিস্তর। কিন্তু গিয়াসউদ্দিন বিশ্বাসই পরিবারের কৃষি পরম্পরা ভেঙে প্রথমবার পা দিলেন ব্যবসায়। ভারত-পাক বিভাজনের প্রক্রিয়া যখন শুরু তখন সংশয়ে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। গঙ্গা-পদ্মার ভাঙনে জর্জরিত মুর্শিদাবাদের মানুষ, কৃষি বিপন্ন হওয়ার কারণে ধুঁকতে থাকা নিরন্ন মানুষ তখন খুঁজে পেতে চাইছে বাঁচার জন্য সামান্য একটি কাজ। কারণ, তখন বন্ধ হয়ে গেছে জঙ্গিপুর কেন্দ্রিক নীল চাষ, লাক্ষা চাষ; হাতছাড়া তাঁদের কৃষিজমিও। এই বিপন্ন সময়ে নিম্নবিত্ত সাধারণ মানুষ ত্রাতা হিসেবে প্রথমে খুঁজে পান গিয়াসউদ্দিন বিশ্বাসকে। পতাকা ছায়ায় এসে দৈনিক মজুরিতেই মানুষ সংসার প্রতিপালনে এগিয়ে এলেন। ধুলিয়ান, অওরঙ্গাবাদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে কারখানা। গিয়াসউদ্দিন বিশ্বাস ছিলেন তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও আত্মপ্রত্যয়ী, দুঃসাহসী এবং ভীষণভাবে সংবেদনশীল। প্রায় পুঁজিহীন ব্যবসার সূত্রপাত করেন তিনি। তাঁর সততা, কর্মচারীর প্রতি বিশ্বাস ও সহৃদয়তা তাঁকে ধীরে ধীর উন্নয়নের পথে ধাবিত করে। সেই মুহূর্তে তাঁর শ্রমিক সংখ্যা ছিল ৬০ থেকে ৬৫ হাজার। এর পরে তো ইতিহাস হয়ে সামনে এসে যায় পতাকা।
মোস্তাক হোসেন : পরম্পরা যাঁর হাতে অর্পিত হল
জন্ম ও বংশতালিকা
গিয়াসউদ্দিন বিশ্বাসের পাঁচ পুত্র ও চার কন্যা। মোস্তাক হোসেন পঞ্চম। তাঁর চার ভাইয়ের নাম যথাক্রমে দাউদ হোসেন, কালিমুদ্দিন হোসেন, আবুল কালাম ও এনামুল হক। চার বোন হলেন আমিনা বেগম, আবিদা বেগম, রাবিয়া বেগম ও মেরিনা বেগম। মোস্তাক হোসেনের জন্ম মুর্শিদাবাদের অওরঙ্গাবাদের চাঁদড়া নামক গ্রামে, ১৯৫৭ সালে। মোস্তাক হোসেনের পত্নীর নাম সানোয়ারা হোসেন। বাপের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে। বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৮৪ সালের মে মাসে। মোস্তাক হোসনের দাম্পত্যজীবনে এসেছে তাঁদের তিন সন্তান। দুই পুত্র শারিফ হোসেন ও সাহিল হোসেন এবং এক কন্যা মুশরেফা হোসেন। বাঙালির জীবন থেকে একান্নবর্তী পারিবারিক ভাবনা উঠে গেলেও মোস্তাক হোসেনের পরিবারে আজও সেই একান্নবর্তী ভাবনা বর্তমান বাংলার পারিবারিক সংকটের মুখে এক অনন্য উদাহরণ।
শিক্ষা
মোস্তাক হোসেনের প্রথম পাঠ শুরু হয়, তাঁর চাঁদড়া গ্রামের প্রদীপ পাঠশালাতেই। তারপর ভর্তি হন নিমতিতার গৌরসুন্দর দ্বারকানাথ ইনস্টিটিউটে। স্নাতক স্তরে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হন বহরমপুরের ঐতিহ্য সম্বলিত কৃষ্ণনাথ কলেজে। এখান থেকেই তিনি অ্যাকাউন্টেন্সিতে বি কম পাশ করেন। কলকাতায় থেকে পড়াশোনা করেন এম কম। চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট পড়তে গিয়েও পিতার অসুস্থতার কারণে পড়াশুনায় তাঁর বিরতি ঘটে। অকপটে তিনি স্বীকার করেছেন, ৭৯ বছর পর ১৯৭৮ সালে পরম্পরাগত অশিক্ষায় অন্ধকারে সফল আঘাত পড়ল অর্থাৎ আমিই বংশের প্রথম গ্র্যাজুয়েট হিসেবে স্বীকৃতি পেলাম। পরের বছরই মুখ উজ্জ্বল করল, বিয়ে পাশ করে আমার ভাইঝি রোশনারা। আমার আগে কেউই কলেজের গণ্ডি পেরোতে পারেনি।
মোস্তাক হোসেনের কর্মযোগ
১৯৮০ সালে পিতা অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি সাময়িক পড়াশুনা ছেড়ে ব্যবসার দেখভাল করতে থাকেন। ব্যবসাতে ঢুকে পড়ে তিনি আর পড়াশুনার জন্য ফিরে যেতে পারেননি। পিতার পায়ের ছাপ অনুসরণ করেই পাড়ি দেন এক অজানা পথে। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি বুঝে যান পতাকার খুঁটিনাটি পরিস্থিতি। তখন তাঁদের ব্যবসার বাজার ছিল সীমাবদ্ধ রাজ্যের কয়েকটি জেলা ও অসম প্রদেশে। আসু ও আবসু আন্দোলনে অসম উত্তাল হওয়ার কারণে অসম বাজারও অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে চিন্তা করেই মোস্তাক হোসেন অন্যত্রও ব্যবসা বাড়াতে শুরু করেন।
পতাকা দৌড়। পতাকার প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যেই তিনি প্রথমে পা রাখেন দিল্লিতে। দিল্লি তাঁকে নিরাশ করেনি। পতাকা উড়তে থাকে সমানে। এরপরে তিনি পা রাখেন হরিয়ানায়। লালা সুশীল শেঠ-এর সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় হরিয়ানার দখল পায় এই পতাকা। দিল্লি, হরিয়ানার পর তিনি একে একে রাজস্থান, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, দক্ষিণ ভারতে পতাকাভিযান চালিয়ে ভীষণভাবে সাফল্য লাভ করেন। শিল্পকে পৌঁছে দেন শীর্ষচূড়ায়। এই ব্যবসাকে তিনি শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছেন নিজস্ব ক্ষমতাবলে এবং ঐকান্তিক নিষ্ঠায়। তাঁর এই বিজয় সাফল্যের পেছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান। একাধারে তিনি ঝুঁকিপ্রবণ, ঝুঁকি নিয়েই বিভিন্ন প্রান্তে ব্যবসাকে প্রসারিত করতে উদ্যোগী হন। ভীষণ নিষ্ঠার সঙ্গে সততার সঙ্গে সংবেদনশীলতার সঙ্গে গণসংযোগ স্থাপন করেন। তিনি তাঁর শিল্পের জন্য পাতার চাষ ও উৎপাদনের বৃদ্ধিতে প্রয়াস নেন, আত্মনিয়োগ করেন। আর সর্বোপরি তিনি শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন, যাতে উন্নতমানের শিল্পজাত উৎপাদন সম্ভব হয়। দক্ষতা ছাড়াই সকলেই কাজের উপযুক্ত হতে পারেন—কিন্তু কাজটা যাতে যথাযথভাবে শিখে নিতে পারেন তার জন্য তিনি ২৫ জনের একটি প্রশিক্ষকের দল গঠন করেন। শ্রমিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য তাঁদের ব্যবহার করা হত। এ-কারণেই ৮০-র দশকে যে ব্যবসায় তাঁর শ্রমিক সংখ্যা ছিল ৬০ থেকে ৬৫ হাজার, এক দশকের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় দু-লাখে। এভাবেই তিনি পতাকা শিল্পকে ৯০ দশকে নিয়ে আসেন ১০-এর মধ্যে, ৯৪-এ তিন-এ এবং তিন বছরের মধ্যে এক নম্বরে। এখন পতাকা শিল্পে এক লাখ ষাট হাজারের বেশি শ্রমিক পিএফ ব্যবস্থা আওতায় রয়েছেন। প্রতিদিন প্রায় দশ কোটি এক-একটা শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদিত হয়। এই ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন দু’লক্ষের বেশি মানুষ।
কিন্তু ৫০২ পতাকা শিল্পকে শীর্ষে পৌঁছে দিয়েই তিনি ক্লান্ত নন। ব্যবসার সমৃদ্ধি ঘটিয়ে তিনি একে একে জুড়ে দেন রেশম শিল্প থেকে ফুডপার্ক। অবশেষে তিনি একান্তভাবে মনোনিবেশ করেন সার্বিক শিক্ষার প্রসারে। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, পতাকা গোষ্ঠীর ফুড প্রসেসিংও বিশ্বের শিল্প বাজারে বিশেষ ভূমিকা নেবে। চা-শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, রেশম শিল্প থেকে ফুডপার্ক—তারাও পরে বাজার দখল নেবে। স্বাস্থ্য পরিষেবায় এবং বিস্কুট শিল্পেও ইতিমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে। ৪২ বিঘা জমির উপর দশটি বাগানময় রেশমের সুতো তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন মালদায়। নবাব আমলে রেশম শিল্প মুর্শিদাবাদ মালদা সারা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়িয়েছে। এই ভাবনা মাথায় রেখে তিনি রেশম ব্যবসায় ঢুকে পড়েন ১৯৯৪-এ। তিনি জানতেন বাংলাদেশের রাজশাহী আজ রেশমশিল্পে বিশ্ববাজার পেয়েছে। মুর্শিদাবাদ-মালদায় তা হতে পারে। তিনি জানতেন বাংলায় যথেষ্ট রেশমের চাষ হলেও চাষিরা তার মুনাফা পায় না। এর লাভ পায় বাইরের দালালরা। তাই রেশমশিল্পের চাষিদের কথা মাথায় রেখেই তিনি এই ব্যবসায় হাত লাগান। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিদেশি যন্ত্রপাতি নিয়েই দেশি মানুষদের নিয়েই তাঁর এই রেশমের শিল্প সাফল্যের পর মোস্তাক হোসেন বিশেষ ঝুঁকি নিয়েই চা-শিল্পের ব্যবসায় নামেন। টাটা বিড়লা এবং হিন্দুস্থান লিভারের মতো বহুজাতিক প্রতিযোগী সামনে থাকা সত্ত্বেও তিনি চা-শিল্পের সংকটের কথা অবহিত হওয়ার পরেও তিনি এই ঝুঁকি নিয়েছেন। কিন্তু সেখানেও তিনি যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছেন। পতাকা চা আজ পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে বিহার, ঝাড়খণ্ড ও অন্যান্য প্রদেশে ঢুকে বাজার করে নিয়েছে। চা-শিল্পের বাজারেও পতাকা টি আজ সকলের পছন্দের ব্র্যান্ড।
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন উমরপুরে একশো একর জমির উপর শুরু হয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা। মুর্শিদাবাদ, মালদায় প্রচুর পরিমাণ সবজি ও ফল উৎপন্ন হয়। শিলান্যাস করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর। এখানে শিল্প ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে যেমন ফল ও সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যাবে তেমনই ফলের প্রক্রিয়াকরণ করে তা আন্তর্জাতিক বাজারেও পাঠানো যাবে। মোস্তাক হোসনের ভাবনায় ছিল, চাষিদের উৎপাদনে যেন তাঁরা ন্যায্যমূল্য পেতে পারেন তার উপর। খাদ্য প্রকল্পের পাশাপাশি থাকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাদ্য শিল্প। বহুজাতিক সংস্থার ও পতাকার যৌথ উদ্যোগে এখানে মোস্তাক হোসনের নবতম সংযোজন জি ডি হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াবেটিস ইনস্টিটিউট। মধ্য কলকাতার ওয়েলিংটন মোড়ে গড়ে তুলেছেন এই হাসপাতাল। আধুনিক যুগের স্বাস্থ্য পরিষেবা, উন্নততম প্রযুক্তি এবং বিখ্যাত চিকিৎসকদের দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এর কাঠামো। খুব সামান্য খরচে গ্রামের সাধারণ মানুষও এখানে চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন। দয়ালু মোস্তাক হোসেন দরিদ্র মানুষের বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে দেন। যা অতুলনীয়। সুন্দরবন থেকে শুরু করে ২৩টা জেলায় প্রতিনিয়ত অভিজ্ঞ ডাক্তার নিয়ে স্বাস্থ্য শিবির পরিচালনা করে জি ডি চ্যারিটেবিল সোসাইটি। মোস্তাক হোসেন-এর সুযোগ্য পুত্র শারিফ হোসেন এবং কন্যা মুশরেফা হোসেন সমাজ কল্যাণে মানুষের সেবায় এগিয়ে এসে নয়া নজির গড়ছেন। যোগ্য পিতার উত্তরসূরি হিসেবে মানুষের মন জয় করেছেন শারিফ হোসেন ও মুশরেফা হোসেন।
সমাজকল্যাণে মোস্তাক হোসেন
তিনি একজন শিল্পপতি। কিন্তু আজ একথাও কারও জানতে বাকি নেই যে তিনি একজন সমাজসেবী। সমাজকল্যাণের কাজ এভাবে কোনও শিল্পপতিকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। তিনি একজন জনদরদি মানুষ। তিনি যতই বিত্তশালী হোন না কেন, তিনি কখনওই বিলাসী নন। অহমিকা তাঁকে কখনও গ্রাস করতে পারেনি। তাঁর মতো দয়ালু ব্যক্তিত্ব ইদানীং চোখে পড়ে না। তিনি সারা বাংলা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জিডি স্কলারশিপ প্রদান করেন। এই স্কলারশিপের টাকার পরিমাণ বছরে প্রায় কয়েক কোটি। অওরঙ্গাবাদের জি ডি চ্যারিটেবল সোসাইটিতে অসংখ্য দুঃস্থ রোগীর বিনা ব্যয়ে চিকিৎসা করা হয় এবং ঔষধ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য পরিষেবা খাতে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর তিনি ব্যয় করেন কয়েক কোটি টাকা। প্রত্যেক বছর মুর্শিদাবাদ এবং মালদায় দরিদ্র মানুষের পুনর্বাসনের জন্য মুক্ত হস্তে দান করেন।
মোস্তাক হোসেন এবং পতাকা শিল্পগোষ্ঠী পশ্চিম বাংলার দরিদ্র মানুষের স্বজন। এর প্রমাণ তিনি বহুবার দিয়েছেন, পশ্চিমবাংলার মানুষ বিপদের সম্মুখীন হলেই তিনি তাঁদের প্রতি সদয় হন। হাত বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার। ১৯৯৩ সাল টর্নেডোর প্রকোপে পড়ে তছনছ হয়ে গেছিল গোকর্ণ, চাটরা, খোশবাসপুর গ্রাম (মুর্শিদাবাদ)। সে সময়ে তিনি বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এই গ্রামগুলিতে তিনি একাই শতাধিক পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁর অবদানের কথা স্বীকার করে আনন্দবাজার লিখেছিল : সরকারের থেকে, রাজনৈতিক দলগুলির থেকেও অনেক বেশি করেছেন জেলার সাধারণ মানুষ এবং অন্যান্য জেলার মানুষ। টর্নেডোর পর সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত গ্রামাঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও মদত দিয়েছে। এই কথা গ্রামের বিভিন্ন মানুষের। তাঁরা গিয়াসউদ্দিন (মোস্তাক হোসেনের পিতা) নামে জনৈক ব্যবসায়ীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অওরঙ্গাবাদের এই ব্যক্তি গোকর্ণ, চাটরা, খোশবাসপুরে ১০০টি ঘর বানিয়ে দিয়েছেন নিজের খরচায়। ইটের দেওয়াল, টিনের ছাউনি। সেখানে স্থান পেয়েছেন গ্রামের মহিলারা। আনন্দবাজার, ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪। ১৯৯৮ সালে ও ২০০১ সালে বন্যার প্রকোপ পড়ে মুর্শিদাবাদ এবং মালদার সাধারণ বানভাসি মানুষ ভীষণ অসহায়তার সম্মুখীন হয়েছিল। এই দুই জেলার বানভাসি মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন মোস্তাক হোসেন। ১৯৯৮ সালে তিনি দু’কোটি এবং ২০০১ সালে এক কোটি ২৭ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন। প্রায় দু’লক্ষাধিক মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে খাদ্য, বস্ত্র, ঔষধ এবং ত্রাণ সামগ্রী দান করেছেন। কার্গিল যুদ্ধে নিহতদের পরিবারের সহায়তার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর হাতে ১৯৯৯ সালের ১১ জুলাই তিনি ১১ লক্ষ টাকার চেক তুলে দিয়েছিলেন। ২০০৯ সালের আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবন এলাকার নিপীড়িত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন মোস্তাক হোসেন। তিনি দু’কোটির অধিক ত্রাণ দিয়েছেন ওই এলাকায়। করোনা কালে লকডাউনের সময়ে চাল, ডাল, আলু, তেল থেকে শুরু করে সমস্ত রকম সাহায্য নিয়ে পতাকা হাউসের কর্মকর্তারা জেলায় জেলায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করেছেন। স্বভাবতই মোস্তাক হোসেন একজন কেবল শিল্পপতিই নন, তিনি একজন সমাজদরদী, সমাজকল্যাণে দায়বদ্ধ দয়ালু এক পরম ব্যক্তিত্ব। আজ একথা অনস্বীকার্য, তিনি কেবল হতদরিদ্র মানুষের বন্ধু নন, তিনি সরকারেরও বন্ধু। কারণ, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সমাজকল্যাণমূলক কাজে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সেল ট্যাক্স থেকে সরকারের আয় হয়, যাতে পতাকা গোষ্ঠী প্রত্যেক বছর সরকারকে দিয়ে থাকেন কোটি কোটি টাকা।
শিক্ষার প্রসারে মোস্তাক হোসেন
শিক্ষার প্রসারে মোস্তাক হোসেনের অবদান অনস্বীকার্য। আজ একথা সকলেরই জানা, তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় একাধিক মিশন শিক্ষার জগতে আলোর জোয়ার আনতে সক্ষম হয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই, মিশন কেন্দ্রিক পড়াশুনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন মোস্তাক হোসেন। তাঁরই উদ্যোগে মিশনের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া মুসলমান সমাজে শিক্ষার সার্বিক প্রসার ঘটেছে। জি ডি চ্যারিটেবল সোসাইটির তত্ত্বাবধানে আজ ৬০টির বেশি মিশন পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার প্রসারে ব্রতী হয়েছে। তিনি এই মিশনগুলিতে বছরে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেন গৃহনির্মাণ প্রকল্পে এবং ছাত্রছাত্রীদের অনুদান প্রকল্পে। এই মিশনগুলি ছাড়াও তিনি অন্য বহু বেসরকারি স্কুল ও মাদ্রাসা নির্মাণের জন্য অর্থ অনুদান দিয়ে থাকেন। মাদ্রাসা, মক্তবেও তাঁর অনুদান অনস্বীকার্য। শিক্ষার জগতে এই প্রসারের কারণে আজ বহু মুসলিম ছাত্র-ছাত্রী জায়েন্ট এন্ট্রান্সের মাধ্যমে ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। গরিব দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচও তিনি বহন করেন। মেধাবী গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য তিনি স্টাইপেন্ড প্রদান করেন। শিক্ষার জগতে তাঁর এই বহুমুখী আন্দোলন জোয়ার এনে দিয়েছে—যার মাধ্যমে এবং অবশ্যই মোস্তাক হোসেনের সাহচর্যে ও অর্থানুকূল্যে অনুন্নত গ্রাম বাংলার গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরা স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে দ্রুত ধাবমান। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জেলা ও রাজ্যের বহু পত্রিকায় ধারাবাহিকভাব তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
মোস্তাক হোসেনের সাহিত্য
ভাবনা
৫০২ পতাকা শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার হয়েও, ভারতের একজন অন্যতম শিল্পপতি হয়েও বহুধা কর্মধারায় ব্যস্ততা সত্ত্বেও তিনি একজন লেখক হিসেবে পরিচিত। তাঁর স্বচ্ছ ভাবনাকে তিনি প্রকাশ করেছেন তাঁর তিনটি গ্রন্থে : ১. নিশান ও নিশানা, ২. গুহার ভেতর আলো, ৩. আলোর নিচে আঁধার। গ্রন্থগুলিতে তাঁর সমাজ ভাবনার স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।
সমাজের জন্য জাতির জন্য তিনি যা করেছেন তা অপ্রতুল নয়, একথা মেনে নিয়েই তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন: ‘যে আমার প্রতিবেশী, যে আমার গ্রামের বাসিন্দা, যে আমার দূর সম্পর্কের ভাই কিংবা ভাইপো, যে আমার সম্প্রদায়, সমাজ ও জাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, যে পাশে না থাকলে স্তিমিত হয়ে পড়ত পতাকা গোষ্ঠীর পতাকা, তারাই আমার এবং আমাদের ক্রমশ অচেনা ও দূরের বাসিন্দা হয়ে উঠছে। কাছাকাছি থাকি, তাদের দেহের ঘাম আমাদের সমৃদ্ধ করে, কিন্তু আমরা টের পাই না, তাদের ক্ষত ভরা অস্তিত্ব। স্পর্শ করি না পরিশ্রমী শ্রমিকের, আমারই অন্যতম সহোদর অগ্রজ কিংবা অনুজের দুঃখময় দুনিয়া। তারা এক অন্ধকার থেকে আরেক অন্ধকারে প্রবেশ করে। তাদের খিদেয় তৈরি হয় নতুন খিদে। তাদের অনিদ্রা ও যন্ত্রণায় বাড়তে থাকে স্থায়ী অসুখ। আমরা দিব্যি চোখ বন্ধ করে, মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। তাদের দুঃসহ বেঁচে থাকা, তাদের অজ্ঞানতা তাদের কুসংস্কার ও বিপদমগ্ন অচেতন অথবা স্তব্ধ হৃদয়কে কখনও উপলব্ধি করি না। এই ক্ষমতাও যেন হারিয়ে ফেলেছি। এর পেছনে পতাকা গোষ্ঠীর যদি কোনও ব্যর্থতা থাকে, তাহলে এর প্রধান সংগঠক হিসেবে এ আমারই ব্যর্থতা। ব্যথার আড়ালে যদি কোনও সামাজিক অক্ষমতা থাকে, এরও দায়ভার একান্তভাবে এই মোস্তাক হোসেনের।’ এই অকপট স্বীকৃতিই তাঁকে আরও মহান করেছে। তিনি একজন শিক্ষাদরদী মানুষ। তারই প্রতিধ্বনি শোনা যায় তাঁর ‘আলোর নীচে আঁধার’ গ্রন্থে। শিক্ষায় জাতির মেরুদণ্ড এই উপলব্ধি তাঁর অন্তরাত্মায়। তাই এই গ্রন্থে তাঁকে বলতে শুনি : …. ইহলৌকিক শান্তি ও কল্যাণের জন্য বিদ্যাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। যে বিদ্যা শুধু ব্যক্তিকে নয়, স্পর্শ করবে তার বংশকে, তার প্রতিবেশীকে, তার এলাকাকে, তার সম্প্রদায়কে, জাতিকে এবং সমগ্র মানব সমাজকে। শিক্ষা প্রসঙ্গে একজন শিল্পপতির এমনতর বক্তব্য নজিরবিহীন।
ঈদ পালনে শপথ নিই সমাজ গড়ার
ঈদ শব্দটি আরবী। ‘আউদ’ ধাতু থেকে এসেছে। এর অর্থ হল পুনরাগমন যা বারবার ফিরে আসে। বৎসরান্তে নির্দিষ্ট সময়ে বারংবার ফিরে আসে বলেই এই মিলন ও সম্প্রীতির উৎসবের নাম হয়েছে ঈদ। ঈদ সকলের মনে আনে খুশি। তাই খুশির উৎসব হল ঈদ। খুশির জন্য চাই সকলের খোলামেলা মন। মুক্ত মনের বহিঃপ্রকাশেই ঈদ মিলন উৎসব সার্থক হয়। তাই ঈদের আনন্দ খুশি ছড়িয়ে পড়ে সংকীর্ণ ভেদ-বুদ্ধির সীমানা আলগা করে জাতি ধর্ম-বর্ণ ও ভাষার গণ্ডি পেরিয়ে সকল সম্প্রদায়ের কাছে চিরন্তন সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, শাশ্বত প্রেম ও মহা মিলনের খুশির বার্তা নিয়ে।
‘ফিতর’ অর্থে খুলে খুলে যাওয়া মুক্ত হওয়া বা পূর্ণতা প্রাপ্ত যা সমাপ্ত হওয়া বুঝায়। কেউ কেউ ফিতর অর্থে শেষের পর্বে খাওয়ার অর্থ বুঝে থাকেন। তাই ঈদ-উল-ফিতর সেই বিশেষ দিনটির নাম, যেদিন দীর্ঘ এক মাস রমজানের নিয়মানুগ কঠোর উপবাস, এবাদত ও সবরকম অপরাধ থেকে দূরে থাকার বিধিনিষেধ, অনুশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণের সাধানায় নিযুক্ত থেকে পুনরায় দৈনন্দিন আহারের নিযুক্ত হওয়ার অনুমতি। আসলে ঈদ-উল-ফিতর হল আল্লাহ’র কাছ থেকে পাপমোচন করে নিজেকে সৎ পথে ফিরিয়ে আনা। তাই মহা আনন্দে পালিত হয় এই খুশির উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। নবী করিম (সঃ) বলেছেন—“নিশ্চয়ই প্রত্যেক জাতির ‘ঈদ’ অর্থে আনন্দোৎসব আছে। তাই আজকের দিন অর্থৎ ঈদ-উল-ফিতর হল আমাদের সকলেরই সেই খুশির ঈদ।” ঈদ সারা বিশ্বে সকল মানুষের জন্য প্রসন্নতার সুখবর এনে দেয়। ঈদের দিন সকল সামর্থ্যবান মুসলিমকেই মুক্ত হাতে ফেতরা, জাকাত, সাদকা ও দান খয়রাত করতে হয়। যার ফলে, আমাদের সমাজের প্রতিটি আর্ত পীড়িত অসহায়, বিপন্ন সর্বহারা ও হতদরিদ্র মানুষেরাও এই খুশির ভাগ নিতে পারেন। এখানেই এই মিলন উৎসবের সার্থকনামা সকলের মধ্যেই সঞ্চারিত হয়। ঈদ হল ত্যাগের, ধৈর্যের, ক্ষমার, ভালবাসার, সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতীক। সকলের মনে ন্যায় ও নীতিই সঞ্চারিত করার পক্ষে আদর্শ।
সকল মুসলিম রমজান মাসে রোজা রেখে ক্ষুধা ও তৃষ্ণাকে ভুলে গিয়ে কঠোর সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে নিজের দোষ ত্রুটি সংযোধন করে আত্মশুদ্ধি করতে বদ্ধপরিকর হয়ে আল্লাহ’র নৈকট্য লাভ করতে পারেন। নবী করিম (সঃ) বলেছেন- ‘যে রোজা আমাদের আত্মশুদ্ধি করে না, সেই রোজা প্রকৃত রোজা নয়, তা নিছক উপবাস মাত্র যা গন্ধহীন ফুল কিংবা নিষ্প্রাণ দেহ মাত্র।’ তাই খাদ্য ও পানীয় থেকে দূরে থাকার নাম রোজা নয়। প্রকৃত রোজা হল অন্যায় ও অসৎ চিন্তা থেকে বিরত থাকা।
‘রমজান’ শব্দের অর্থ হল অগ্নিদগ্ধ। যে মাসে রোজা পালনের মধ্য দিয়ে অনাহারের তীব্র দহনজ্বালা ও সহনশীলতার কঠিন পরীক্ষা, সেই মাসের গুণাগত নাম হল রমজান। রোজার উপবাস দ্বারা প্রশমিত হয় রোজদারের অসৎ চিন্তা ও কুমনোবৃত্তি। সীয়াম সাধনায় মানুষরের মনে বেড়ে যায় তাঁর আত্মিক, মানসিক ও সর্বাঙ্গীণ উন্নতি। তাই মাহে রমজানে মুসলিমদের মনে ও সমাজে নেমে আসে, দয়া-মায়া, স্নেহ-প্রীতি, ভক্তি-করুণা ও সহনশীলতার মতো অজস্র সৎ চিন্তার বিচিত্র সমারোহ।
মুসলিম জাহানে রমজান মাস হল রহমতের মাস, বরকতের মাস, গোনাহ পাপ মাফ হওয়ার মাস, আল্লাহ’র অসীম করুণায় নৈকট্যলাভের মাস, আত্মশুদ্ধির মাস, ধৈর্যের মাস, সাধনার মাস ও সকল দুস্থ গরিব, অনাথ ও দীন-দুঃখীর সাহায্য করার মাস। প্রকৃত সমাজ বিকাশে ও শিক্ষা প্রসারের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ারও মাস। তাই শাশ্বত কালের চিরন্তন সাম্য, মৈত্রী ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রীতির বন্ধন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতর জাতীয় সংহতির জ্বলন্ত প্রতিক হল মহামিলনের মহোৎসব ঈদ-উল-ফিতর। ঈদ পালনে জাতিধর্ম নির্বিশেষে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে মধুর আলিঙ্গণের মধ্যে খুঁজে পাই—বৈচিত্রের মধ্যে একতার মধুর ও অনাবিল ঐকতানের আনন্দ খুশির অত্যুজ্বল সুবর্ণময় তিথি। ঈদ বয়ে আনুক বিশ্বের সকল মানুষের জন্য অফুরন্ত শান্তি সুখ ও সমৃদ্ধি এবং গভীর ভালবাসা। তাই আসুন, আমরা সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদকে দূরে ঠেলে ঈদ মিলনের মধ্য দিয়ে সম্পীতির বন্ধনে ও আলিঙ্গণে আবদ্ধ হয়ে প্রকৃত মানুষ রূপে নিজেদেরকে গড়ে তুলি। আর তা করতে পারলেই দেশ ও দশের সত্যি মঙ্গল হবেই। সাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা ও মানুষের ক্ষতিসাধন থেকে সাধারণ মানুষদের বুঝিয়ে সৎ পথে আনতে পারলেই সমাজ উপকৃত হবে। তখনই মহতি ঈদ পালনের উদ্দেশ্য সফল হবে বলে মনে করি। তাই এই সমাজকে শিক্ষা সচেতন করে তোলা জরুরি। ঈদ মিলনের ময়দানে জায়নামাজে দু’হাত তুলে শেষ দোয়ায় শপথ নিতে হবে আমাদেরকে সকলের জন্য সুস্থ সমাজ গড়ার। মনের মধ্যে রাগ-অভিমানকে কমিয়ে নিজেদের অধিকার নিজেদেরই অর্জন করতে হবে। কারণ কারও মৌলিক অধিকার কেউ পাইয়ে দিতে পারে না, তা নিজ যোগ্যতায় ছিনিয়ে নিতে হয়। নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও কাটাকাটি না করে, কে কী দিল আর দিল না, এই ভেবে সময় নষ্ট করার থেকে যার যেটুকু ক্ষমতা আছে তাই দিয়ে নিজের অনগ্রসর সম্প্রদায়কে টেনে তুলতে হবে। পাড়ায়-পাড়ায় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত প্রতিভাদেরকে শিক্ষা আলোয় আলোকিত করতে হবে নিজেদেরই। তাহলে সমাজ ও দেশ এগিয়ে যাবে সামনে আরও সামনে। ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে ভুল প্রমাণ করে নিজেদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মুসলিম বলে কিছু হবে না। এমন ধারণা পোষণ করা পাপ। ইসলাম সৎ পথে সঠিক লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগায়। পারতেই হবে। বাঙালির ঘরে ঘরে শিক্ষা প্রসার ঘটাতে অনন্য পথিকৃৎ সারথি হিসাবে কাজ করেছেন পতাকা হাউসের কর্ণধার মোস্তাক হোসেন। অনগ্রসর মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে কোচিং থেকে মিশন স্কুল গড়ে ভারতের অসহায় মানুষের পরম বন্ধু হয়ে উঠেছেন পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপুত্র মোস্তাক হোসেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকাল মানুষের কল্যাণে আপদে-বিপদে অফুরন্ত সাহায্য নিয়ে হাজির হন মোস্তাক হোসেন। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি তিনি সর্বদাই সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দেন সাধারণ মানুষের মনে। বাঙালি জাতির গৌরব পুনরুদ্ধারের কাজও করেছেন মোস্তাক হোসেন। পৃথিবীর নানান প্রান্তে গর্বের সঙ্গে একাত্ম হয়ে মানবসেবা করছেন মোস্তাক হোসেনের সাহায্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত বহু ছাত্র-ছাত্রী। বিভিন্ন জেলায় আবাসিক মিশন স্কুল গড়ে পতাকা হাউস ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করছেন। সমাজ কল্যাণে অফুরন্ত অবদান রাখার জন্য মোস্তাক হোসেন নোবেল শান্তি পুরষ্কার পেলে গর্বিত হবেন ভারতবাসী। ভারতের অসহায় মানুষের পরম বন্ধু হয়ে উঠুক নতুন প্রজন্ম। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সচেতন ভারতীয় এগিয়ে আসুক।
লেখক: সমাজকর্মী, প্রকাশক ও সম্পাদক: উদার আকাশ।