সৌমিত্র হাজরা : আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বর্ধমানের গোদা বালির মাঠ ময়দানে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার সরকারি পরিষেবা প্রদান জেলারঅনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এদিন মুখ্যমন্ত্রী ১৩৭ টি জনমুখী প্রকল্পের শিলান্যাস ও ৩৬০ টি প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করেন। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও এদিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুই পুলিশ সুপার সহ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ মলয় ঘটক সহ একাধিক মন্ত্রী বিধায়ক ও সাংসদ।
এদিন অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান ” আজ ২ লক্ষ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন। ৩৮ হাজার লক্ষীর ভান্ডার তুলে দেওয়া হল। দুই জেলার নবম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের ৩৬ হাজার সাইকেল প্রদান এবং সারা বাংলায় দশ লক্ষ সাইকেল প্রদান করা হবে। সরকারের কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান দুই জেলা জুড়ে ৫২ হাজার কৃষক বন্ধু যাদের বছরে 10000 টাকা করে দেওয়া হয়। ৩৫ হাজার খাদ্য সাথী, ২৩াজার স্বাস্থ্য সাথী, সাত হাজার কন্যাশ্রী, ৪৬০০ ঐক্যশ্রী, 9000 বিনামূল্যে চোখের আলো পরিষেবা প্রদান করা হয়। খুব শীঘ্রই কালনা থেকে শান্তিপুর ১১০০ কোটি টাকা ব্যয় একটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। যা বর্ধমান থেকে নদীয়ার খুব সহজেই সংযোগ স্থাপন করবে। অন্যদিকে আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেদিনীপুর থেকে মোরগ্রাম পর্যন্ত একটি সড়ক পথ নির্মাণ করা হচ্ছে। যােদিনীপুরের দাসপুর থেকে জয়রামবাটী হয়ে বর্ধমানের নতুনগ্রাম হয়ে মোর গ্রামের ওপর দিয়ে নর্থ বেঙ্গল চলে যাবে। অন্যদিকে প্রতি বছরই বর্ষায় ডিভিসির জল ছাড়ার কারণে বর্ধমান হুগলী বাঁকুড়া এবং হাওড়া জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বন্যা মোকাবিলায় ২ হাজার৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে যার ফলে এই চারটি জেলার ৪০টি ব্লকের ৩০ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবে। এছাড়াও পূর্ব বর্ধমান জেলার ১১ লক্ষ বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হবে। যার মধ্যে ৪ লক্ষ ইতোমধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের২ লক্ষ ৮৬ হাজার বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়া হবে।ইতিমধ্যেই একইতিমধ্যেই এক লক্ষ চার হাজার বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
এদিন মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানান “কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না।রাজ্যকে ১০০ দিনের টাকা দেয়নি।যারা কাজ করেছে তাদের প্রাপ্য টাকাও দেওয়া হয়নি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে।এই বাজেটে ছয় হাজার কোটি টাকা কেটে নিয়েছে যাতে আগামী দিনে ১০০ দিনের কাজ মানুষ করতে না পারে।
আর কথায় কথায় খালি সেন্ট্রাল টিম পাঠাচ্ছে।ছারপোকা কামড়ালেও সেন্ট্রাল টিম পাঠাচ্ছে।সাত হাজার কোটি টাকা পায় বাংলা।রাজ্যের প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না উল্টে রাজ্যের টাকা কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে কেন্দ্র। এদিন মঞ্চ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান একশ দিনের টাকা না পেলে বাংলা থেকে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
অন্যদিকে ৪০ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারদের কর্মসংস্থান করেছে রাজ্য।এক কোটি কুড়ি লক্ষ ছাত্রছাত্রীদের রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ঐক্যশ্রী টাকা দেওয়া হচ্ছে।যেখানে অন্যান্য বিজেপি সরকার পরিচালিত রাজ্য গুলিতে দাঙ্গা বা সন্ত্রাস ছাড়া আর কোন উন্নয়নমূলক কাজ হয় না। এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান। আমার মুখ বন্ধ করা যাবে না।আমি গরিবের জন্য কথা বলি আর বলবোও।কেন্দ্রীয় সরকার খাদ্যে ভর্তুকি তুলে দিয়েছে প্রায় যাতেজনগণ রেশন না পায়।একশ দিনের টাকা কেটেছে ফুড সাবসিটি কেটেছে।রাজ্য সরকার তাও নিজের টাকা থেকে অনেকটা দেয়। ক্ষমতায় আসার পর আমরা দশ বছরে ১১ লক্ষ চাকরি দিয়েছি।
অন্যদিকে নাম না করে সিপিএম কেউ এক হাত নাই মুখ্যমন্ত্রী।তিনি বলেন তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন কি কি করেছে সবই জানা আছে।এখন কেন্দ্রীয় সরকারকে বাংলায় ১০০ দিনের টাকা দিতে বারণ করছে।এক লক্ষ কোটি টাকার উপর আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাই।তার বদলে ১১ লক্ষ লোকের বাড়ির টাকা আটকে দিয়েছে।রাস্তা করার টাকা দেওয়া হচ্ছে না। বাড়ি করার টাকা দেওয়া হচ্ছে না।একশ দিনের কাজের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। স্কলারশিপ বন্ধ করে দিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী জনগণের উদ্দেশ্যে এও বলেন যে চাকরির জন্য বাইরে যাবেন না।নিজেদের জীবনে ঝুঁকি নেবেন না।এখানেই চাকরি হবে।পুরুলিয়া থেকে ডানকুনি পর্যন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডোর তৈরি করা হচ্ছে।যেখানে ইতিমধ্যেই ৭২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে রাজ্য সরকার।আগামী দিনে বাংলার ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল।আগামী দিন আরও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে।অপরদিকে সংবাদ মাধ্যমের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন। মিডিয়ার কোন স্বাধীনতা নেই।সত্যি কথা বলতে পারবে না। সংবাদ মাধ্যম গুলো এখন কেন্দ্র সরকার এর অঙ্গুলি হেলনে চলছে।এদিন কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন আপনারা ভাল মতো নিজেদের কাজ করে যান রাজ্য সরকার সব সময় আপনাদের পাশে আছে।আপনাদের প্রয়োজনে সব রকম সহযোগিতা রাজ্য সরকার করবে।(ছবি : সুশান্ত বাগ )