নূতন ভোরের প্রতিবেদন : বিজেপির অন্দরে বিদ্রোহের আগুন, বর্ধমান পূর্বের প্রার্থীকে নিয়ে লেখা হল- দম থাকলে বিধানসভায় পদত্যাগটা করে আসুন
বর্ধমান পুর্বের বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকারকে প্যারাসুট লিডার বলে কড়া সমালোচনা করেছেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা মেমারীর সন্তোষ রায়। আবারো বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে।বিধানসভা ভোটের সময় ১৬টি বিধানসভার রাজ্য কনভেনার হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন সন্তোষ রায়। সোস্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ২০১৯ এর পর থেকেই রাজনৈতিক অপারদর্শী, অযোগ্য ও অনুপ্রবেশকারীতে ভরে গেছে এবং বিজেপির বর্তমান লাগাম ভয়ানকভাবে এখন তাদেরই হাতে। যার চরম উদাহরণ ২০১৯ এর পর থেকেই জেলা ও রাজ্য স্তরের ৯০ শতাংশ সাংগঠনিক পদাধিকারীদেরকে দেখলেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবেন। দ্বিতীয়ত, বর্দ্ধমান পূর্বের ২০১৯ এর প্রার্থী সহ বাংলার অনেক প্রার্থীকেই প্যারাসুটে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
যারা বিজেপির এবিসিডি জানতেন না। একদিনও বিজেপি করেনি, লোভ আর স্বাদ মেটাতে এসেছিলো, পালিয়েও গেলো। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বঙ্গের প্রার্থী চয়ন তো বলে দেয় অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা আরো ভয়ানক অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিলো। তাদের দখলেই পার্টিটার সম্পূর্ণ লাগাম চলে গেছিলো। যেখানে দাঁড়িয়ে ১৪৮ জনের মত সদ্য তৃনমূল সহ বিরোধী দল থেকে আসা অবিজেপিরা প্রার্থী হয়ে গেলেন। যাঁদের বেশিরভাগেরই ব্যক্তিগত সুনাম ভয়ানক ছিলো। যাঁদেরকে দেখে মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে বিজেপিকে বিকল্প ভেবেছিলেন। কিন্তু তাদেরকেই ধরে ধরে এনে বিজেপির সম্পদ রুপে টিকিট ধরিয়ে দেওয়া হল।
সন্তোষবাবু লিখেছেন, পার্টির নীতি, আদর্শ, সিদ্ধান্ত, বিচারধারা সব তালাবন্ধি, জলাঞ্জলি হয়ে গেলো। এর ফলে বিরাটভাবে যথার্থ আদর্শবান, সৎ, সংগ্রামী, শক্তিশালী নিষ্ঠাবান, ত্যাগী, নির্লোভী, যোগ্য,অভিজ্ঞ,অনুভবী,পারদর্শী বিজেপি নেতৃত্বকে সাংগঠনিকভাবে এবং প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থেকে নির্মমভাবে বঞ্চিত, উপেক্ষিত, অপমানিত করা হল। বাদ রাখা হল। এবং তার ফল বঙ্গ বিজেপি হাতেনাতে পেল। অবধারিত রাজ্য যেমন হাতছাড়া হল, তেমনি নির্বাচন পরবর্তী যে ভয়াবহ হিংসা বিজেপির সাধারণ থেকে অতি সাধারণ কর্মী, কার্যকর্তা ও বিজেপির ভোটারদের উপর নেমে এসেছিলো তা নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। কিন্তু সেই ভয়ানক পরিস্থিতি সামাল দিতে বা আক্রান্ত বিজেপি কর্মী, ভোটারদের পাশে দাঁড়াতে কিন্তু সেইসব তথাকথিত হঠাত বিজেপি হয়ে ওঠা নেতানেত্রী নামক মালিক, প্রভুদের টিকিটিও দেখা পাওয়া গেল না। সব ফোন বন্ধ করে, গর্তে ঢুকে গেল।
সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামলেন সেইসব বঞ্চিত, আদর্শবান, সৎ, নিষ্ঠাবান, লড়াকু, আপাদমস্তক বিজেপি কার্য্যকর্তা ও নেতৃত্বরা। সন্তোষবাবু লিখেছেন, এই ২০২৪ এর মহা নির্বাচনেও পাওয়া গেলো না। পার্টি কোনো শিক্ষাই নেয়নি। প্রার্থী তালিকায় সেটা পরিষ্কার। অনুপ্রবেশকারী, প্যারাসুট লিডারদেরই দাপাদাপি। আবার পার্টির যথার্থ ও উপযুক্ত, যোগ্য নেতৃত্বদেরকে, বঞ্চিত, অবজ্ঞা, উপেক্ষা করা হল। বাদ দেওয়া হল যারা যথার্থ অর্থে পার্টিম্যানদের। যাঁদের গ্যারান্টি আছে। যারা ভূমি থেকে উঠেছেন। প্যারাসুটে বা লিফটে না। যাঁদের সাথে মানুষ আছেন, কর্মী, কার্য্যকর্তারা আছেন। কিন্তু আজ তারা বিজেপির মধ্যে এনআরসির শিকার। নতুন, পুরনো সব্বাইকেই দরকার। যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, পারদর্শিতার ভিত্তিতেই নির্ণয় হওয়া উচিৎ। সেটা বহু ক্ষেত্রেই হচ্ছে না বলেই, যাঁদের সাথে যেটা হওয়ার নয়, সেটা হচ্ছে।
এই যথার্থরা এনআরসির শিকার বিজেপিতে। সন্তোষবাবু লিখেছেন সম্মানীয় দিলীপ ঘোষ দা, দেবশ্রীদি সহ যারা কয়েকজনকে টিকিট দেওয়া হয়েছে, তাদেরকেও জেতার পরিবর্তে হার নিশ্চিত করতে এনআরসি করে দেওয়া হল। বর্দ্ধমান পূর্বে অসীম সরকারকে প্যারাসুটে করে এনে ঘাড়ে নামিয়ে দেওয়া হলো তা কিসের ভিত্তিতে? কোন যোগ্যতায়? একদিনও বিজেপির ফ্লাগ না ধরে ২১এ হরিণঘাটা থেকে এমএলএ হয়ে গেলেন। সেখানে কি কি সেবা করেছেন তা উনি আর হরিণঘাটার মানুষই জানেন। জীবনে একদিনের জন্যও মানুষের জন্য, বিজেপির জন্য কিছু না করেই ৩-৪ লক্ষ মানুষের সেবক রুপে এমএলএ হয়ে গেলেন। কিন্তু মাত্র তিন বছরেই ওনার ৩ লক্ষ মানুষের সেবার রুচি মরে গেলো? এখন উনি ২৫ লক্ষ মানুষের সেবা করতে চান। তা যদি সেটাই ইচ্ছা তবে, দম থাকলে বিধানসভায় পদত্যাগটা করে আসুন। তবেই তো মানুষ বুঝবেন, আপনাকে বিশ্বাস করবেন। যে, আপনি জিতবেন এবং জিততে এসেছেন। নতুবা তো মানুষ এটা ভাবছেন যে, আপনি নিশ্চিত হারবেন জানেন। এই জন্য গাছেরও খাবেন, আর তলারও কুড়াবেন এই মানষিকতা নিয়ে লড়াইয়ের নামে চান্স মারতে চলে এসেছেন।