১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Advertisement

বাঙালি মুসলমান : আপন ভুবনের সন্ধানে উদার আকাশ প্রকাশনের ঐতিহাসিক গ্রন্থ

ফারুক আহমেদ : দেশ-বিভাগ পরর্বতী পশ্চিমবাংলার জাতিসত্তা বিষয়ক অনন্যসাধারণ প্রাবন্ধিক ইতিহাসবেত্তা, উপমহাদেশ বিষয়ক সমাজবিজ্ঞানী খাজিম আহমেদের দীর্ঘজীবনচর্চিত অজস্র প্রবন্ধাবলীর মধ্য থেকে ১৮টি দিক-নির্দেশক, কঠোর পরিশ্রমজাত প্রবন্ধ এই গ্রন্থটিতে প্রকাশ করা হয়েছে।

অনির্বচনীয় প্রকাশ স্টাইল, তার শব্দ ব্যবহার, দুর্বোধ্য প্রবন্ধ পাঠ-কেও সুখপ্রদ করে তুলেছে।
বাঙালি মুসলমানদের বড়াে দুর্ভাগ্য হচ্ছে, মধ্যবিত্ত শ্রেণি হিসেবে তাদের বিলম্বিত উত্থান। এখনও সেই বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গে অনেকাংশে প্রযােজ্য। সেই ‘পরাভব চেতনা থেকে মুক্তির পথসন্ধান করা হয়েছে, ‘বাঙালি মুসলমান : আপন ভুবনের সন্ধানে’—নামক এই বিস্ফোরক গ্রন্থে। অসাধারণ মননদীপ্ত এই প্রবন্ধগুলাে খাজিম আহমেদের স্বীয় মনস্বিতার দ্বারা অর্জিত সম্পদ আর ওজস্বিতার ফসল।
খাজিম আহমেদ-এর প্রথম প্রবন্ধ সংকলন ‘পশ্চিমবাংলার বাঙালি মুসলমান : অন্তবিহীন সমস্যা’, ‘উদার আকাশ’ প্রকাশন থেকে দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণালব্ধ গ্রন্থটি উভয়বঙ্গে ব্যাপক সমাদৃত। গবেষকদের প্রথম পছন্দের ‘রেফারেন্স’ গ্রন্থ হিসেবে মান্যতা পেয়েছে।

Advertisement

বাঙালি মুসলমান : আপন ভুবনের সন্ধানে খাজিম আহমেদ রচিত, উদার আকাশ প্রকাশনের ঐতিহাসিক গ্রন্থ আগামী শনিবার কলকাতা প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। ইতিমধ্যে বইটি বিভিন্ন বইয়ের দোকানে এবং অ্যামাজনে পাওয়া যাচ্ছে।

উনিশ শতকের গোড়ার দিকে পূর্ণতাপ্রাপ্ত বাংলার মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণিতে মুসলমানদের কোনো অংশীদারী ছিল না। অথচ ‘বঙ্গ’ নামে বাংলার বিভিন্ন জনপদকে একতাবদ্ধ করে তুলবার কাজ হিন্দু আমলে যে সাধিত হয়নি, এটি সর্বজন স্বীকৃত মত। এই কাজ সাধিত হয়েছিল মুসলমান আমলে।১ বাংলাদেশে মুসলমানদের আগমন আর সুফি মনীষীদের (বুজর্গ) মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু হওয়ার ছ’শো (৬০০) বছরের মধ্যে এটাই ছিল বাংলার মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে দুঃসময়। মুসলমানদের হাত থেকে ‘হুকুমতি তখ্ত’ চলে যাওয়ার বছর অর্থাৎ ১৭৫৭ সাল থেকে শুরু করে বিশ শতকের শুরু পর্যন্ত প্রায় দেড়শ (১৫০) বছর পর্যন্ত সময়কালকে বাংলার মুসলমানদের জন্য অন্ধকার কাল হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। স্মর্তব্য যে, মোগল আমলে বাংলাদেশে এবং মোগল সাম্রাজ্যের বাইরে অবস্থিত দুটি স্বাধীন প্রত্যন্ত রাজ্যেও (রোসাঙ্গ ও ত্রিপুরা) মুসলিম বাংলা সাহিত্যের আলোচনা ও চর্চা অব্যাহত ছিল।২ এই প্রসঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে, ১৮৫৭ সালে একটি অসফল সিপাহী বিদ্রোহের পর হিন্দুস্তানে মুসলমানদের জন্য বর্ণনাতীত দুর্ভোগ ও অসার্থকতা নেমে আসে।৩ এমন কথার সমর্থন মেলে এম. আর. আখতার মুকুলের ‘কলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী’ নামক গ্রন্থে।

Advertisement

১৯০৫-১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ এই সময়টিকে মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমান শ্রেণির আত্মপ্রতিষ্ঠা ও প্রসারণের কাল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।৪ অর্থাৎ বিশ শতকের শুরু থেকেই বাঙালি মুসলমান সমাজ স্বরূপ সন্ধানে প্রয়াসী হয়ে উঠে। বস্তুত ১৯২০ সাল থেকে ১৯৪৭ সালের মধ্যে একটি মর্যাদাশীল জাতিসত্তা হিসেবে উত্থিত হয়। জীবন-জিন্দেগির প্রতিটি স্তরে সাড়া দেবার (Response to Change) মানসিকতা গড়ে ওঠে। এমন সময়ে দেশভাগের মারফত এই উপমহাদেশে আজাদী আসে। বাঙালি মুসলমানের আত্মবিকাশের পথটিও এপার বাংলায় রুদ্ধ হয়ে যায়। নয়া উত্থিত বাঙালি মুসলমান বুদ্ধিজীবী সমাজের একটি বিরাট অংশ মানইজ্জত আর প্রতিষ্ঠার সওয়ালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে ‘হিজরত’ করলেন। পশ্চিম বাংলার মুসলমানদের জীবনে রাজনৈতিক বিবর্তনের ফলে নেমে আসে এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। তখন কলকাতায় হিন্দুর চেয়ে মুসলমানের জানমালের ক্ষতি হয়েছিল অনেক বেশি।৫ দেশ-বিভাগের পর বাঙালি মুসলমান সমাজ অকস্মাৎ অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। স্বতন্ত্র জাতিসত্তা, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার এই রাজনৈতিক আইডিয়া পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সময়ের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

এহেন পরিস্থিতিতে বাঙালি মুসলমানদের বৌদ্ধিক ক্ষেত্রটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, সেটি স্বাভাবিক ছিল। বাঙালি মুসলমান সমাজের এই সংকট সন্ধিক্ষণে তাদের মেধা আর মননের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন হুমায়ুন কবির (১৯০৬-‘৬৯), কাজী আবদুল ওদুদ (১৮৯৪-১৯৭০), সৈয়দ মুজতবা আলী (১৯০৪-‘৭৪), আবু সয়ীদ আইয়ুব (১৯০৬-‘৮২) ও রেজাউল করিম (১৯০২-‘৯৩)। দেশ-বিভাগের আগেই উল্লিখিত ব্যক্তিরা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এ সময় বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের একাংশ উদ্যোগী হন। সে লক্ষ্যে দুটি সাহিত্য সংগঠন স্থাপিত হয়। এর একটি কলকাতায় এবং অপরটি ঢাকায়।৬ ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিষয়ক ভাবানুষঙ্গগুলো এম. আবদুর রহমান কঠোর পরিশ্রমে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।

Advertisement

দেশবিভাগের পর সাহিত্য আর সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল তা পশ্চিমবঙ্গীয় মুসলমানদের হতচকিত করলেও একেবারে হতোদ্যম হয়ে পড়ে নি। এ সময় সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে গ্রহণ করা হয় রেনেসাঁ সোসাইটি ও সাহিত্য সংসদের নীতি। এই নীতি বিশেষভাবে লক্ষণীয় হয় বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে।৭ তার প্রকাশ কিয়ৎকাল পরে লক্ষ্যযোগ্য হয়ে উঠেছে। সেই সময় তরুণ মুসলমান সাহিত্যিকদের মধ্যে যে ক’জন উজ্জ্বল সম্ভাবনার পরিচয় রাখছিলেন তাঁদের মধ্যে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, আবদুল আজীজ আল্-আমান ও আবদুল জব্বারের নাম বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য।
দেশবিভাগের পর বাঙালি মুসলমান সমাজের সাংস্কৃতিক সত্তার যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, এমন সময় সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ নানা দুর্যোগ আর সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে নিজের মর্যাদা আর আভিজাত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন, সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি মুসলমানরা আত্মমর্যাদার কেন্দ্রটি চিহ্নিত করতে প্রয়াসী হয়েছেন। জনাব সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ছিলেন ‘কম্পোজিট কালচারের’ শীর্ষ প্রতিনিধি। এ সময় বাঙালি মুসলমান লেখকের দৃষ্টিতে বিশেষভাবে কেন্দ্রীভূত হয় তাঁর সমাজ ও সম্প্রদায়গত অনুভূতি। এ ক্ষেত্রে সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মুসলমান লেখকের ভূমিকা স্মরণযোগ্য।৮ বিশেষত আধুনিক শিক্ষা, স্বাধীনতা অর্জন, বিজ্ঞান ও আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে যোগযোগ বিষয়ে তাঁদের প্রচেষ্টা সমাজের অগ্রগতিতে সহায়ক হয়েছিল।

আবদুল আজীজ আল আমান (১৯৩২-১৯৯৪) এপার বাংলার সাহিত্য জগতে এক শ্রদ্ধার যোগ্য ব্যক্তিত্ব। বিভাগ পরবর্তী পশ্চিম বাংলার মুসলমানদের সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তিনি প্রায় অভিভাবকতুল্য দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সৃষ্টিশীল সাহিত্য নির্মাণ মুসলমান জীবনের সহানুভূতি সিক্ত অন্তরঙ্গ পরিচয় তার কলমে প্রোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। উপন্যাস, কবিতা, গল্প, ধর্মাশ্রয়ী ইসলাম বিষয়ক রচনা, কাজী নজরুল ইসলালকে নিয়ে গবেষণা আর ‘জাগরণ’ দু’পর্যায়ের ‘কাফেলা’ আর ‘গতি’ নামক সংবাদ সাহিত্য পত্রিকার মারফত এক তুখোড় লড়াই করেছিলেন। তাঁরই প্রতিষ্ঠিত ‘হরফ প্রকাশনী’ প্রকাশনার ক্ষেত্রেও যে উচ্চ গুণমানের নজির স্থাপন করেছিলেন সে ধারা আজও অনুকরণযোগ্য।৯ সৃষ্টিশীল এই মানুষটিকে শ্রদ্ধা না জানাতে পারলে জাতির অপ্রাপ্তি থেকে যাবে। সে কারণে জাতির উচিৎ এমন মনীষীদের জীবনকথা সর্বসাধারণ পর্যন্ত পৌঁছানো।

Advertisement

আবদুল জব্বার গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের জীবনের রূপকার। উপেক্ষিত এবং অবহেলিত মানুষের আঁতের খবর, নির্যাতিত মানবাত্মার মর্মন্তুদ আর্তনাদ তাঁর সৃজনশীল সাহিত্য নির্মাণে প্রাধান্য পেয়েছে। সমাজ ও অর্থ বিচারে তিনি নিজেও ছিলেন নন-প্রিভিলেজ শ্রেণির প্রতিনিধি। কাজী আবদুল ওদুদ আর হুমায়ুন কবিরের অশেষ স্নেহ ধন্য আবদুল জব্বারের সাহিত্যকর্মের ভূয়সি প্রশংসা করেছেন আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং প্রেমেন্দ্র মিত্র। কাজী আবদুল ওদুদ ‘শরৎচন্দ্র ও তারপর’ (১৩৬৮) গ্রন্থের একটি অংশে শরৎচন্দ্র উত্তরকালের বাংলা কথাসাহিত্যের প্রধানত বাস্তববাদী অংশের পরিচয় প্রদান করতে গিয়ে অন্য আরও অনেকের সঙ্গে আবদুল জব্বারের আর গোলাম কুদ্দুসের (জন্ম-১৯২০) সাহিত্য সৃষ্টির মূল্যায়ন করেছেন।১০ তাঁদের অবদান বিশেষভাবে তাই স্মরণীয়।

দেশবিভাগ পরবর্তী নয়া প্রজন্ম থেকে উত্থিত খাজিম আহমেদ (জ.১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৭) জন্মগ্রহণ করেন মুর্শিদাবাদ জেলার রানীনগরে অবস্থিত কাতলামারির মালিপাড়া গ্রামে।১১ বস্তুত তিনি প্রবন্ধ নির্মাণের ক্ষেত্রে কাজী আবদুল ওদুদ১২ রেজাউল করিম আর এম. আবদুর রহমানের উত্তরসূরী হিসেবে নিজের মেধা আর মননকে নিজস্বতার খোঁজে নিরপেক্ষতা এবং বৃহত্তর নৈর্ব্যক্তিকতার প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করছেন। অনির্বচনীয় প্রকাশ স্টাইল তার শব্দ ব্যবহার দুর্বোধ্য প্রবন্ধ পাঠকেও সুখপ্রদ করে তোলে। আর বিষয় নির্বাচনে খাজিম আহমেদের সমাজ মনস্কতা পুনঃ পুনঃ আমাদের চমকিত করে। দেশ বিভাগজনিত কারণে একটি আন্তর্জাতিক এবং একেশ্বরবাদী জাতিসত্তার প্রতি যে অবিচার এবং ‘দূরমুশ’ করার প্রবণতা ক্রিয়াশীল ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠের মনে তার বিরুদ্ধে যে যৌক্তিক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তা প্রখর নির্ভীকতার পরিচয়বাহী। ‘বেসুমার’ মুগ্ধতা নিয়ে প্রকাশক হিসেবে তাঁর প্রথম অসাধারণ প্রবন্ধগ্রন্থ ‘পশ্চিমবাংলার বাঙালি মুসলমান : অন্তবিহীন সমস্যা’ পাঠক সজ্জনের দরবারে পেশ করি। প্রবন্ধগ্রন্থ এমনভাবে সমাদৃত হবে তা চিন্তার অগোচর ছিল। সোজাসুজি বলতে কি বাংলা আর ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোতে ২০১২-তে ব্যাপক সুখ্যাতি করা হয়েছিল। আজও-বেঙ্গলি পত্র-পত্রিকায় উক্ত গ্রন্থটির রিভিউ হচ্ছে। প্রথম মুদ্রণ নিঃশেষিত। দ্বিতীয় সংস্করণ ‘উদার আকাশ প্রকাশন’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। লকডাউন আমাদের বিড়ম্বিত করেছে। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন বিগত চুয়ান্ন বছর অগণন প্রবন্ধ তাঁর পত্রস্থ হয়েছে, অথচ সেগুলো গ্রন্থাকারে পাওয়া গেল না কেন? এমনবিধ প্রশ্ন আমার মনেও ছিল। জনাব আহমেদকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করায় দ্বিধাহীন উত্তর করলেন, ‘এই অকৃতী অধমের কাজ হলো লেখা, পাঠক পড়বেন, প্রকাশক বই ছাপাবেন, এটাই তো দস্তুর। বই প্রকাশ আমার কর্ম নয়।’ এমনই নির্মোহ তাঁর মানস ভাবনা। ‘উদার আকাশ পত্রিকা’র সম্পাদক এবং ‘উদার আকাশ প্রকাশন’-এর পরিচালক হিসাবে আমি তাঁর সাহিত্য সৃষ্টিকে গ্রন্থবদ্ধ করার অভিপ্রায় এবং অভিলাষ পোষণ করি। আমার পরম শ্রদ্ধেয় অভিভাবক তুল্য খাজিম আহমেদ সানন্দে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। মল্লিক ব্রাদার্স, প্রভিনিসিয়াল বুক এজেন্সি, নবজাতক প্রকাশন, লেখা প্রকাশনী, বুকস ওয়ে, অভিযান পাবলিশার্স, সর্বোপরি প্রবাদপ্রতিম মিথ বা কিংবদন্তি প্রকাশন সংস্থা ‘হরফ প্রকাশনী’র উত্তরসূরি হিসেবে ‘উদার আকাশ প্রকাশন’ বিগত এক দশকে প্রায় শতটি গ্রন্থ সফলভাবে প্রকাশ করেছে। সাহিত্যের সব শাখাতেই এই নয়া আর তরতাজা প্রকাশন বিচরণ করেছে।পাঠকবর্গের স্নেহ-ভালবাসা, পৃষ্ঠপোষকতা আমাদের পরমপ্রাপ্তি। স্বভাবতই নত-মস্তক হচ্ছি।

Advertisement

দেশবিভাগ পরবর্তী পশ্চিমবাংলার জাতিসত্তা বিষয়ক অনন্য সাধারণ প্রাবন্ধিক ইতিহাসবেত্তা উপমহাদেশ বিষয়ক সমাজ বিজ্ঞানী খাজিম আহমেদের দীর্ঘ জীবন চর্চিত অজস্র প্রবন্ধাবলির মধ্য থেকে ১৮টি দিকনির্দেশক গবেষণা ‘উদার আকাশ প্রকাশন’ থেকে ‘বাঙালি মুসলমান : আপন ভুবনের সন্ধানে’-এর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ প্রকাশের সুযোগ পেয়ে নির্মল গর্বানুভব করছি। সততার সঙ্গে উচ্চারণ করি ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের মে মাস থেকে ২০১৯-এর ২৫ ডিসেম্বর তক জনাব খাজিম আহমেদ ‘ডেডলি ডিজিজ’-এর সঙ্গে লড়াই করছিলেন এবং অবশেষে তিনি সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। দীর্ঘদিন বাদে তাঁর লেখক সত্তাকে পুনরুজ্জীবিত করার সওয়ালে শ্লাঘা বোধ করছি। ‘উদার আকাশ প্রকাশন’ হরওয়াক্ত তাঁর পাশে রয়েছে। ‘উদার আকাশ পত্রিকা’য় দেড় ডজনের ওপর প্রথাবিরোধী কঠোর পরিশ্রম সাধ্য গবেষণাজাত প্রবন্ধ খাজিম আহমেদ লিখেছেন। সমালোচনা, নানাবিধ মূল্যায়ন ছয় দশকের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ও ‘উদার আকাশ’ শীর্ষক রচনা বিভাগ পরবর্তী পশ্চিমবাংলার ৬০ বছরের এক ঐতিহাসিক দলিল ভবিষ্যতের জন্য রেখে গেলেন। বিশেষত ইসলামী সভ্যতার গৌরবময় ইতিহাসের পুনরুদ্ধার, উপেক্ষিত ও বিস্মৃত মুসলিম ব্যক্তিত্ব, ভারত ইতিহাসে মুসলিম শাসকদের ভূমিকাকে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ভ্রান্তির ড়োজালে জড়িয়ে উত্থাপনের বিরুদ্ধে প্রকৃত সত্য আহরণ, বিভাগ-পরবর্তী এ বাংলায় মুসলমানদের দুঃখ-দুর্দশা প্রভৃতি ইতিহাস ও সমাজভিত্তিক প্রবন্ধ রচনার মাধ্যমে তিনি হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের ভুল বোঝাবুঝি ও মানসিক দূরত্ব অবসানের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে থাকেন।১৩ বলাবাহুল্য নিজস্বতার খোঁজে তাঁর রচিত রচনাগুলো মূল্যবান উপাদান হিসেবে বিবেচিত হবে।

‘বাঙালি মুসলমান : আপন ভুবনের সন্ধানে’ নামাঙ্কিত এই গ্রন্থের বিষয়সমূহের মর্মবস্তু সম্পর্কে যৎকিঞ্চিৎ পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ এলাকার পুরো জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই ছিল ইসলামধর্মী। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশ বিভাগের পর জনবিন্যাসের পরিবর্তন হয়ে যায়।১৪ এর ফলে নানা মুসিবতের জন্ম নেয়। বস্তুত বর্তমান গ্রন্থটিতে নিজস্বতার খোঁজে, মর্যাদার সন্ধান, আত্মচেতনার বিকাশ আর স্বরূপ সন্ধান প্রয়াসী হয়েছেন বর্তমান গবেষক ও লেখক। এ বিষয়ে ড. রফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন ‘A Quest for Identity ; Preface’ ‘দ্য বেঙ্গল মুসলিমস’, ১৮৭১-‘০৬। Richard M. Eaton ‘The Rise of Islam and the Bengal Frontier, 1204-1760’ নামক গ্রন্থে (Copyright: The Regents of the University of California) লিখেছেন, ‘In 1984 about 93 million of the 152 of the estimated 96.5 million people inhabiting Bangladesh, 81 million or 83 percent. Were Muslims in fact, Bengalis today comprise the second largest Muslim ethnic population in the world, after the Arabs.’ উপাদানের সূত্র: Richard V. Weekes, Ed. Muslim Peoples: A World Ethnographic Survey, 2nd Ed. (Westport Green Wood Press). (Page-2). এমন বিশাল সংখ্যক বাঙালি মুসলমানদের বেদনার কথাটি ডক্টর এ আর মল্লিক প্রকাশ করেছেন এইভাবে, ‘বাঙালি মুসলমানদের বড় দুর্ভাগ্য হচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি হিসেবে তাদের মন্থর ও বিলম্বিত অভ্যুত্থান। এখনও সেই বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গে অনেকাংশে প্রযোজ্য।’ সেই ‘পরাভব; চেতনা’ থেকে মুক্ত হবার পথ সন্ধান করা হয়েছে ‘বাঙালি মুসলমান : আপন ভুবনের সন্ধানে’ নামক এই বিস্ফোরক গ্রন্থে।

Advertisement

হাজী মুহম্মদ মোহসীনের কাছে বাঙালি জাতির ঋণ অপরিমেয়। অবিভক্ত বাংলার অতিদূর প্রত্যন্তেও তাঁর দানে বহু শিক্ষার্থী জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছেন। অথচ হাজী মুহম্মদ মোহসীনের প্রতি যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা জরুরি ছিল আত্মবিস্মৃত বাঙালি জাতি তা করেনি। অথচ হিন্দু-মুসলমান সকলেই তাঁর কাছে দায়বদ্ধ। প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁর বিপুল ধন-সম্পদের উপার্জিত অংশ থেকে উভয় সম্প্রদায়ই উপকৃত হয়েছিল। ১৭৬৯-৭০ খ্রিষ্টাব্দের সরকারি দলিল থেকে জানা যায় যে, ওই সময়ের মহাদুর্ভিক্ষে তিনি বহু লঙ্গরখানা স্থাপন করেছিলেন এবং সরকারি সাহায্য তহবিলে অর্থ প্রদান করেছিলে। তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম চিরকুমার ও মহান জনহিতৈষী ভ্যক্তি।১৫ কলকাতাকেন্দ্রিক পশ্চিমবাংলায় হাজী মুহম্মদ মোহসীন সম্পর্কে নিশ্চিত অনীহা বিস্ময়াবহ। বাঙালির সেই কৌতুহলহীনতা অপনোদনের অভিপ্রায়েই ‘বাঙালি মুসলমান জাগরণের অপ্রত্যক্ষ অভিভাবক হাজী মুহাম্মদ মহসীন’ গ্রন্থবদ্ধ করেছি। মহাপ্রাণ মহসীনের মৃত্যুর শতবার্ষিকীতে ১৯১৩ সালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁকে ‘One of the Greatest Indian of the 18th century’ বলে সম্মান নিবেদন করেন।

উনিশ শতকের শেষার্ধ থেকে বাঙালি মুসলমান সমাজের বিকাশ ও প্রতিষ্ঠার তাগিদে যাঁরা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে নওয়াব আবদুল লতিফ (১৮২৮-১৮৯৩) এবং জাস্টিস সৈয়দ আমীর আলীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলার মুসলমানদের ঘোর দুর্দিনে নবাব আবদুল লতিফ রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি মুসলমানদের ধ্বংসের মুখ থেকে রক্ষা করে তাদেরকে উন্নতির পথে চালিত করার জন্য কর্মপন্থা অবলম্বন করেন। উত্তর ভারতের মুসলমানদের উন্নতির জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ খান যেরূপ কাজ করেছেন, আবদুল লতিফ বাংলার মুসলমা্নদের উন্নতির জন্য সেরূপ প্রচেষ্টা চালান।১৬ মুসলিম বাংলায় আধুনিকতার অগ্রনায়ক আবদুল লতিফ নামক সন্দর্ভে তাঁর ঐতিহাসিক অবদান সম্পর্কে মূল্যায়ন করা হয়েছে।

Advertisement

সৈয়দ আমীর আলী পূর্বভারতের মুসলমান সমাজে একজন ত্রাণকর্তা হিসেবে অবতীর্ণ হন। ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক পুনর্জাগরণ ও সাংস্কৃতিক পুনর্জন্মের জন্য তাঁর দান সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।১৭ মুসলিম চিন্তার উৎকর্ষ বিধান আত্মজিজ্ঞাসার উদ্বোধন করা ছিল তাঁর জ্ঞানগর্ভ তথ্যভিত্তিক ও বৈজ্ঞানিক যুক্তি সিদ্ধান্ত প্রণয়নের উদ্দেশ্য। প্রতিবেশী হিন্দুরা হিন্দুধর্ম ও ভারতের পুরাণ ইতিহাসকে আশ্রয় করে পুনর্জাগরণ ও জাতীয়তাবাদের সুর তুলেছেন। ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসাবে মুসলমানদের কাছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তার তথ্যপূর্ণ ও যুক্তিশীল রচনা দ্বারা খ্রিস্টান জগতের অনেক ভ্রান্তি ও অজ্ঞানতা দূরীভূত হয়। চোখে ইসলামের ও মুসলমানদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় সৈয়দ আমির আলী ইসলামের ‘বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যানুভূতি’তে বিশ্বাস করতেন।

জামাল উদ্দীন আল আফগানির (১৮৩৯-১৮৯৭) জন্ম ইরানে হলেও পূর্বপুরুষদের সূত্রে নিজেকে আফগানি বলে পরিচয় দিতেন। মুসলমান সমাজে তিনি যে সংস্কার আন্দোলন শুরু করেছিলেন তার ঢেউ ভারতেও এসে পৌঁছায় এবং নিজেও তিনি এ দেশে এসেছিলেন, এমনকি কলকাতাতেও। ইংরেজ সরকার এই সম্মানিত অতিথির সাথে দেশীয় নাগরিকদের মেলামেশার পথে যতদূর সম্ভব অন্তরয় সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। এর পরেও আফগানির প্রভাবে মুসলিম চিন্তানায়কগণ প্যান-ইসলামের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন।১৮ তাঁর চেষ্টা ছিল ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীর মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করা, যে কারণে তাঁকে প্যান ইসলামিক নেতা বলা হয়। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল আধুনিক।

Advertisement

মুসলিম সাহিত্য সমাজ : বুদ্ধি ও বিবেকের মুক্তি আন্দোলন
মুসলমান সমাজে আধুনিক মনষ্কতা উজ্জীবনের জন্য ক্রিয়াশীল ছিল। মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে এই সংস্থা কাজ শুরু করে সংস্থার প্রথম সম্পাদক হন আবুল হোসেন। কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী আনোয়ারুল কাদির, কাজী মোতাহার হোসেন প্রভূত পরিশ্রম করেছিলেন এই সংস্থার সাফল্যের জন্য। জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব। ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত এই ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ স্থাপিত হয় ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জানুয়ারি।১৯ বিভাগপূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ছিল কলকাতা। ফলে ঢাকায় কোনো সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে ওঠেনি।‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ই প্রথম সাংস্কৃতিক সংগঠন।

রেজাউল করিম সংস্কৃতির সমন্বয়ের জন্য পুরো জীবন কাজ করেছেন। তাঁর ধর্মভাবনা সম্প্রীতি বোধে উদ্দীপ্ত। এই উদার বোধ থেকে ‘সাধক দারাশিকো’র জীবনাদর্শকে ব্যাখ্যায়িত করেন। বাংলা আর ইংরেজি মিলিয়ে দু’ডজন গ্রন্থের তিনি প্রণেতা। সম্প্রীতির অগ্রণী সৈনিক রেজাউল করিম।

Advertisement

সৈয়দ বদরুদ্দোজা বিভাগ পরবর্তী পশ্চিম বাংলার মুসলমানদের মন থেকে মাইনোরিটি কমপ্লেক্স সংখ্যালঘিষ্ঠতা জনিত অস্বস্তিকাতরতা দূর করতে প্রয়াসী ছিলেন। তিনি নিরন্তর প্রচার করতেন যে, স্বদেশের ধুলোমাটি অনেক বেশি পবিত্র, তাঁরা যেন দেশত্যাগ না করেন। স্বদেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ অর্থাৎ ‘হুব্বুল ওয়াতানে মিনাল ইমান।’ দেশত্যাগ বন্ধ করাই ছিল তাঁর বিশাল জীবনের মহান ব্রত। সৈয়দ বদরুদ্দোজা এক মহাজীবনের কথা। এটি একটি দলিল বিশেষ।

হুমায়ুন কবির কবি, সাহিত্যিক, সমালোচক, দার্শনিক হিসেবে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক এই মানুষটি ফরিদপুরের সন্তান হওয়া সত্বেও দেশ বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাননি। তিনি দেশবিভাগের বিরোধী ছিলেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ‘ভারত-পাকিস্তান’ যুদ্ধের সময় রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে মুসলমানদের উপর যে হয়রানি করা হচ্ছিল তখন জাতীয় স্তরের মুসলিম বুদ্ধিজীবী নেতা অধ্যাপক হুমায়ুন কবির এর প্রতিবাদ করেছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের কাছে কখনো দরবার, কখনো বা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করে গেছেন।২০ তাঁর ছাত্রজীবন আর অধ্যাপনার জীবন ছিল অত্যুজ্জ্বল। এমন বিশাল মাপের মানুষের মূল্যায়ন হয়নি পশ্চিমবাংলায়।

Advertisement

এম. আবদুর রহমান অবিভক্ত বাংলা এবং খণ্ডিত পশ্চিমবাংলার একজন বিশিষ্ট পণ্ডিত ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। ইসলামি সংস্কৃতি জীবনীগ্রন্থ ইসলাম বিষয়ক প্রবন্ধ এবং ইতিহাসাশ্রয়ী লেখায় তাঁর ক্ষমতা প্রমাণিত। বিস্মৃতপ্রায় মনীষী এম. আবদুর রহমানকে স্মরণযোগ্য করে তুলেছেন ইতিহাসবেত্তা খাজিম আহমেদ। এমন উপেক্ষার সময়ে এই উদারপ্রাণ মানুষটিকে বিস্মৃতির অতল গহ্বর থেকে টেনে তোলা অপরিহার্য ছিল।

মৌলানা আজাদ এই উপমহাদেশের রাজনীতি ক্ষেত্রে এক ‘মহান আর নিঃসঙ্গ পদাতিক’। তাঁকে প্রথমে কয়েদ-ই-আজম অভিধায় ভূষিত করা হয়, কিন্তু সময় তাঁকে নির্বান্ধব করে তোলে, কী দুঃসহ ‘দর্দ’ তাঁর হৃদয়কে ছিন্ন করে দেয়। তার সাবুত রয়েছে প্রকাশিত সন্দর্ভটিতে।

Advertisement

এই উপমহাদেশের বাংলা সাংবাদিকতার মহীরুহ আবুল কালাম শামসুদ্দিন পশ্চিমবঙ্গীয় সাংস্কৃতিক জগতে অনালোচিত থেকে গেলেন।২১ অথচ তাঁর নির্দেশনায় সাংবাদিকতার পাঠ নিয়েছেন-প্রয়াত সন্তোষ কুমার ঘোষ, সাগরময় ঘোষ এবং আরও কয়েকজন কলকাতাকেন্দ্রিক যশস্বী সাংবাদিক-সাহিত্যিক। ১৯৪৬-এর দাঙ্গাকালে দৈনিক আজাদের দপ্তরে আসা-যাওয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁর প্রিয়ভাজন সন্তোষ কুমার ঘোষের জন্য। জনাব শামসুদ্দিন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে ঘৃণা করতেন।

ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ মুসলমান শীর্ষক নিবন্ধে খাজিম আহমেদ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একান্ত অন্ধ ও বদ্ধ ধারণার শিকড় সমূলে উৎপাটন করে দিয়েছেন। কোনটা সন্ত্রাসবাদ কোনটা ইনসাফের জন্য লড়াই আর কোনটা স্বাধীনতা সংগ্রাম দেশ ও মহল বিশেষে তার মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদ শক্তিগুলি ঊনবিংশ শতাব্দীতে এশিয়া-আফ্রিকা প্রভৃতি মহাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্র দখল করার পর তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনসাধারণ রুখে দাঁড়ালেই তকমা দেওয়া হতো এরা হচ্ছে সন্ত্রাসবাদী। আর বিংশ শতাব্দীতে যখনই মুসলমানরা নয়া ঔপনিবেশিকতাবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, তাদেরকে ‘উগ্র-সন্ত্রাসবাদী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে সাম্য, ইনসাফ ও সুবিচারকে দমন করার জন্য এই শব্দগুলি হচ্ছে হাতিয়ার। সমগ্র বিষয়টির ওপর নির্মোহ দৃষ্টিপাত করেছেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ জনাব খাজিম আহমেদ।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি সমাজ গুরুবাদ, অদৃষ্টবাদ, অবতারবাদ, ভক্তিবাদ-এ আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। কবজ-মাদুলির মাধ্যমে জীবনের সিঁড়িগুলিকে ডিঙ্গিয়ে উপরে ওঠার লড়াইয়ে মত্তপ্রায়। এমন মানুষই অন্ধতার মধ্যে সেক্যুলারিজমের চর্চা প্রায় না মুমকিন। এদেশে সেক্যুলারিজম বলতে সব ধর্মকে চুমু খাওয়ার নীতি বোঝানো হচ্ছে। আদতে ইউরোপীয় কনসেপ্টে সেক্যুলারিজম হচ্ছে, ‘অ্যাবসেন্স অব রিলিজিয়ান’ অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ধর্মহীনতা। এতদ্দেশীয় সেক্যুলারিজমে বোঝানো হচ্ছে সব ধর্মকে সম্মান উৎসাহদান। এটি যথার্থ আইডিয়া নয়। সমাজবিজ্ঞানী খাজিম আহমেদ নির্মোহ একটি মূল্যায়ন আমাদের সামনে হাজির করেছেন।

ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ ফ্যাসিবাদ আর অতলান্তিক এক অসহিষ্ণুতা অবিশ্বাস্য গতিতে এতদ্দেশীয় জনমানসকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে অথচ সবাইকে আপন জ্ঞান করায় আবহমানকাল থেকে ভারতের চিন্তনের বৈশিষ্ট্য। এক অদ্ভুত আঁধার ঘিরেছে চারিদিক। স্বাধীনতার এত বছর পরেও পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে আর্থিক ও সামাজিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া ঘরের ছেলেমেয়েরা মূল স্রোতে উঠে আসতে পারিনি। বঞু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কিছু সংখ্যক উচ্চশিক্ষা নিতে এগিয়ে আসছে-এটাই এখন বড় আলোর দিশা। এ বিষয়ে কিছু মিশন স্কুলের অবদান উল্লেখযোগ্য।২২ মর্মস্পর্শী আলোচনাটি খাজিম আহমেদ সতর্কতায় উপস্থাপিত করেছেন। গ্রন্থটিতে আমরা মূলত সাবেক বাংলা আর পশ্চিমবাংলার বিষয়টিতে গুরুত্ব আরোপ করেছি। তথাপি ভারতের মুসলমানদের জন্য চিন্তা ভাবনাও রেখেছি। এটি প্রকাশিত হয়েছিল মহাশ্বেতা দেবীর ‘বর্তিকা’- ‘মুসলিম সমাজ ভাবনা’ (১৯৮৮ জানুয়ারি-মার্চ) সংকলনে। এই সংখ্যাটি সম্পাদনা করেছিলেন খাজিম আহমেদ।

Advertisement

অপ্রতিরোধ্য অশ্বারোহী সেনানায়ক মালিক ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী ১১৯৯ থেকে ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কয়েক বছর ঝড়ের গতিতে জীবন পরিচালনা করেছেন এবং সাবেক বাংলায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। মুসলমানদের এই বিজয় সমগ্র উত্তর ভারতব্যাপী মুসলিম আধিপত্য বিস্তারের একটি পর্যায় হিসেবে ধরতে হয়।২৩ সেই সুবাদে জেলা মুর্শিদাবাদে ইসলামের পত্তন ও বিকাশ চমকপ্রদভাবে বিস্তৃতি পেয়েছে। ইখতিয়ার উদ্দিন ছিলেন এক ট্র্যাজিক অধিনায়ক।

দেশবিভাগ পরবর্তী পশ্চিমবাংলার নয়া প্রজন্ম থেকে উত্থিত মধ্যবিত্ত মুসলিম বাঙালি সমাজের মেধা ও মননের প্রতিনিধিস্থানীয় সমাজবিজ্ঞানী খাজিম আহমেদ ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে একবিংশ শতকের মুর্শিদাবাদ জেলায় ইসলামের উত্থান, প্রতিষ্ঠা, বিকাশ আর বিশ শতকের ১৯৪৭ থেকে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জেলার রাজনীতিতে মুসলমানদের ভূমিকা বিষয়ক একটি অত্যাধুনিক গবেষণাজাত প্রবন্ধ নির্মাণ করেছেন। আলোচনাটি এতই বিস্তৃত এবং বিশাল যে, তা ভবিষ্যতে গবেষকদের কাছে একটি দলিল হিসেবে মান্যতা পাবে। ‘মুর্শিদাবাদ : মুসলিম ভাবানুষঙ্গ’, ‘সুবেবাংলার নিজামত প্রশাসন : অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারা’, ‘দেশবিভাগ পরবর্তী মুর্শিদাবাদের রাজনীতিতে মুসলমানদের ভূমিকা’ শীর্ষক তিনটি কঠোর পরিশ্রম লব্ধ বীক্ষণ আমরা গ্রন্থবদ্ধ করেছি। ভিন্নতর জেলার জন্য আমাদের এই পরিকল্পনাটি অনুসরণযোগ্য হতে পারে।

Advertisement

সৈয়দ আমির আলী সম্পর্কিত তিনটে পাঠ-প্রক্রিয়াজাত লেখা (অণীক মাসিকপত্র) এবং সাপ্তাহিক ঝড়ে প্রকাশিত চিন্তানায়ক আমির আলী শীর্ষক একটি মূল্যায়ন পরিশিষ্ট অংশ মুদ্রিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলা সমীচীন যে, স্যার সুরেন্দ্রনাথ তাঁর A Nation in Making নামক গ্রন্থে বলেছেন, হিন্দু মুসলমানের বিরোধের সূচনা স্বদেশী আন্দোলন থেকে, তার পূর্বে এই দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক ছিল মধুর।২৪ শুধু তিনি নয়, এমন ধারণা ও অভিমত দেশের প্রায় অধিকাংশ শিক্ষিত ব্যক্তির।

অসাধারণ মননদীপ্ত এই প্রবন্ধগুলো খাজিম আহমেদের স্বীয় মনস্বিতার দ্বারা অর্জিত সম্পদের এবং তদজাত ওজস্বীতার ফসল। ‘চতুরঙ্গ’- সম্পাদক, আবদুর রাউফ; ‘মাসিক কাফেলা’- সম্পাদক আবদুল আজিজ আল্-আমান; ‘বর্তিকা’-সম্পাদক, মহাশ্বেতা দেবী; ‘কলম’ এবং ‘পুবের কলম’- সম্পাদক, আহমেদ হাসান; ‘জনমত’-সম্পাদক, রাধারঞ্জন গুপ্ত; ‘গণকণ্ঠ’-সম্পাদক, প্রাণরঞ্জন চৌধুরী; ‘অণীক’ এবং ‘মুর্শিদাবাদ বীক্ষণ’-সম্পাদক, দীপঙ্কর চক্রবর্তী; ‘আবার এসেছি ফিরে’, ‘এবং পুনশ্চ’-সম্পাদক, এবাদুল হক, সর্বোপরি ‘উদার আকাশ পত্রিকা’য় বিভিন্ন সময়ে প্রবন্ধগুলি প্রকাশিত হয়েছিল। সম্পৃক্ত পত্রিকার পরম শ্রদ্ধেয় সম্পাদক মহোদয়দের ‘উদার আকাশ প্রকাশন’-এর পক্ষ থেকে আন্তরিক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। ‘মৌলানা আজাদ এক নিঃসঙ্গ পদাতিক’ অতিসম্প্রতি মুদ্রিত হয়েছিল জাইদুল হক সম্পাদিত দৈনিক ‘আপনজন’ পত্রিকায়।

Advertisement

‘উদার আকাশ প্রকাশন’, উদার জীবনের অন্বেষণ আর ‘কম্পোজিট কালচার’ (মিশ্র সংস্কৃতির আবহমান ধারা)-এ বিশ্বাস করে। সেই সুবাদে ‘বাঙালি মুসলমান : আপন ভুবনের সন্ধানে’ গবেষণা গ্রন্থটি সুজন পাঠকদের দরবারে হাজির।২৫ বলা সংগত যে, দেশ বিভাগের পর মুসলমানদের জীবন সাধারভাবে দিন যাপনের গ্লানিতেই আচ্ছন্ন ছিল। দেশ গঠন ও নির্মাণের জন্য তারাও যে কিছু করতে পারে সে ভাবনাটিকে তারা রূপ দিতে পারছিলেন না।
তথ্যসূত্র

১. ড. মুহম্মদ এনামুল হক, মুসলিম বাংলা সাহিত্য (ঢাকা : মাওলা ব্রাদার্স, ২য় প্রকাশ, ১৯৯৮), পৃ. ৯।
২. গোলাম সাকলায়েন, মুসলিম সাহিত্য ও সাহিত্যিক (ঢাকা : নওরোজ কিতাবিস্তান, ১৯৬৭), পৃ. ২।
৩. এম. আর. আখতার মুকুল, কলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী নামক মর্যাদাপূর্ণ একটি গ্রন্থে, পৃ. ২৯।
৪. নাজমা জেসমিন চৌধুরী, বাংলা উপন্যাস ও রাজনীতি (ঢাকা : মুক্তধারা, তৃতীয় প্রকাশ, ১৯৯১), পৃ. ৫০। বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যে আবর্তের সৃষ্টি হয় তাতে মুসলমান আর অধিকাংশ হিন্দু পরস্পবিরোধী চিন্তাধারার পরিচয় দেন। ফলে বঙ্গভঙ্গের সংকটময় মুহূর্তে বাঙালি হিন্দু-মানস কেবল যে ইংরেজ বিদ্বেষী হয় তা নয়, মুসলমনদের প্রতিও বিরূপতা প্রদর্শন করে। মুসলমান সমাজ তখন অমুসলিম সমাজকে সন্দেহের চোখে দেখতে থাকেন।
৫. আবুল মনসুর আহমদ, আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর (ঢাকা : খোশরোজ কিতাবিস্তান মহল, ৮ম মুদ্রণ, ১৯৯৯), পৃ. ১৯৮। দেশ বিভাগ পরবর্তী বহু প্রদেশে দানবীয় নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। আর দেশ বিভাগের কারণ ছিল কলকাতা দাংগা। এই দাংগার পরে ইংরেজ-হিন্দু-মুসলমান তিনপক্ষই বুঝতে পেরেছিল দেশ বিভাগ ছাড়া উপায়ন্ত নেই।
৬. সাঈদ-উর রহমান, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন (ঢাকা : অনন্যা, ২০০১), পৃ. ১৬।
৭. তদেব, পৃ. ১৭।
৮. আনিসুজ্জামান, মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য (ঢাকা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬৪, পৃ. অবতরণিকাংশ।
৯. খাজিম আহমেদ, বাঙালি মুসলমান আপন ভুবনের সন্ধানে (পশ্চিমবঙ্গ : উদার আকাশ, ২০২১), পৃ. নিবেদন অংশ।
১০. খন্দকার সিরাজুল হক, মুসলিম সাহিত্য সমাজ : সমাজ চিন্তা ও সাহিত্যকর্ম (ঢাকা:বাংলা একাডেমী), পৃ. ৩৮১।
১১. মনিরুদ্দিন খান, খাজিম আহমেদ : সম্প্রীতি ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের অক্লান্ত সৈনিক, (ফারুক আহমেদ- সম্পাদিত, উদার আকাশ, ২০ বর্ষ, সংখ্যা ১ম, ২০২১), পৃ. ৯৭।
১২. কাজী আবদুল ওদুদ একজন বিশিষ্ট গদ্য লেখক-তাঁর এই বিশিষ্টতা শুধু রচনাশৈলী ও ভাষার দিক থেকেই নয়, চিন্তা ও মননশীলতার দিক থেকে, মতবাদ ও জীবনদর্শনের দিক থেকেও। চিন্তা ও ভাবের চর্চা তার ব্যসন বটে, কিন্তু আসলে তিনি একজন সচেতন সাহিত্যিক। তাই সাহিত্য ধর্মকে ডিঙ্গিয়ে তাঁর রচনা কখনো প্রচারধর্মী হয়ে ওঠেনি। হয়ত এ কারণেই তাঁর পাঠকসংখ্যা উদারধর্মী সাহিত্যিক ও সাহিত্যরসিক সমাজেই একরকম সীমাবদ্ধ। ড. সাঈদ-উর রহমান, ওদুদ চর্চা (ঢাকা : কাকলী প্রকাশনী,১৯৮২), পৃ. ৮০।
১৩. মনিরুদ্দিন খান, খাজিম আহমেদ : সম্প্রীতি ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের অক্লান্ত সৈনিক, প্রাগুক্ত, পৃ. ৯৮।
১৪. ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে বাঙালি মুসলমানের মধ্যে জাতীয় জাগরণের একটি দিক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। ফলে পরবর্তীতে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে স্বার্থের সংঘত অধিকতর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ক্রমশ জীবনের সর্বক্ষেত্রে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। আবার মুসলমানদর মধ্যে অসন্তোষের বহ্নি ধূমায়িত হতে থাকে। ফল স্বরূপ ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ আগষ্ট দেশ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ড. মুহম্মদ এনামুল হক, মুসলিম বাংলা সাহিত্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৭৪।
১৫. সিরাজুল ইসলাম সম্পাদিত, বাংলা পিডিয়া-১১খণ্ড (ঢাকা : এশিয়াটিক সোসাইটি, ২য় সংস্করণ, ২০১১), পৃ. ৩৯৩।
১৬. কে.এম. রাইছউদ্দিন খান,বাংলাদেশ ইতিহাস পরিক্রমা (ঢাকা:খান ব্রাদার্স অ্যাণ্ড কোম্পানি, পুনমুর্দ্রণ, ২০০৬), পৃ. ৫৮০।
১৭. মুসলিম আইন ও ইতিহাসে তাঁর অসামান্য ব্যুৎপত্তি ও পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি বহু বছর কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম বিলেতের প্রিভি কাউন্সিলের সভ্য হবার সম্মন লাভ করেন। পেশাগত দায়িত্ব পারনের পাশাপাশি তিনি মুসলমানদের রাজনৈতিক সংগঠন ও ইসলামের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে কাজ করতেন। তদেব, পৃ. ৫৮৫।
১৮. আনিসুজ্জামান, মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩১৪।
১৯. ড. সাঈদ-উর রহমান, ওদুদ চর্চা, প্রাগুক্ত, ১৯।
২০. খাজিম আহমেদ,মর্যদার অন্বেষক হুমায়ুন কবির (ফারুক আহমেদ-সম্পাদিত, উদার আকাশ, ১৯ বর্ষ, সংখ্যা ২য়, ২০২০),পৃ, ২৭।
২১. আজহার ইসলাম, বাংলা মসাহিত্যের ইতিহাস-আধুনিক যুগ (ঢাকা : অনন্যা, ৩য় সংস্করণ, ২০০১), পৃ. ৫৫৪।
২২. ফারুক আহমেদ-সম্পাদিত, উদার আকাশ (পশ্চিমবঙ্গ : ঘটকপুকুর, ভাঙড়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ১৯ বর্ষ, সংখ্যা ২য়, ২০১৯), পৃ. উৎসর্গ পত্র, ৯।
২৩. ড.মুহম্মদ আবদুর রহিম ও অন্যান্য, বাংলাদেশের ইতিহাস (ঢাকা:নওরোজ কিতাবিস্তান, একাদশ সং, ২০০৫, পৃ. ১৪৭।
২৪. কাজী আবদুল ওদুদ, শাশ্বত বঙ্গ (ঢাকা : ব্র্যাক প্রকাশনা, বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থ সিরিজ, ২য় সংস্করণ, ১৯৮৩), ১৬৩।
২৫. খাজিম আহমেদ, বাঙালি মুসললান : আপন ভুবনের সন্ধানে (পশ্চিমবঙ্গ : প্রকাশক উদার আকাশ, ২০২১)।

Advertisement